সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। গতকাল শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আদালতে গিয়ে নিজেদের কথা বলা উচিত।
কোটাবিরোধীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনো দূরভিসন্ধি আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে মানুষের চলাচলে বাধা দিলে আইন অনুযায়ী যেটা যৌক্তিক সেটা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। খবর বিডিনিউজের।
কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য আমাদের সংবিধানের, সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী। সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনা সরকারি আলোকেই হবে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, পবিত্র সংবিধানের আলোকেই কেবলমাত্র রাষ্ট্রপরিচালনা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক অসাম্যঞ্জস্য নিরোধের জন্য নাগরিকদের মধ্যে সুষম বন্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে। কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে দুজন মাত্র। ৫০টি জেলায় নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি। সংবিধানের উল্লেখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সরকারি চাকরিসহ সকল ক্ষেত্র সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, সেজন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে কোটা সবচেয়ে কম বলে দাবি করেন তিনি। কোটা বিরোধিতায় অশুভ শক্তি নেমেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য : রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আদালতে গিয়ে নিজেদের কথা বলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বিকালে ময়মনসিংহের পুলিশ লাইনস মাঠে ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ : ময়মনসিংহ জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটা উঠিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর বিচার বিভাগ থেকে বার্তা আসছে কোটা আবার চালু হবে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়েছে আমাদের ছাত্ররা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, হাই কোর্টের রায় স্থগিত করেছেন। ছাত্রদের বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের কথা উচ্চতর আদালতে বলে। তাহলে বিচারপতিদের বিচার করতে সুবিধা হবে।
মানুষের স্বার্থে আন্দোলনকারীদের রাস্তা অবরোধ না করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট বন্ধ না করে তারা কোর্টে এসে তাদের কথা বলুক। রাস্তাঘাট বন্ধ করলে লাভ কী হবে আমি জানি না। দুর্ভোগ বাড়বে জনগণের। আমি মনে করি, আপনারা প্রধান বিচারপতির পরামর্শ মতো আদালতে এসে আপনাদের কথা বলুন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী : কোটাবিরোধীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনো দূরভিসন্ধি আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে–নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। এগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে একেক দাবি জানাচ্ছে। এখানে তাদের সম্মুখ ধারণার অভাব আছে মনে হচ্ছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত ঘটনা প্রবাহের ওপর তার পর্যবেক্ষণ তুলে বলছেন, প্রথমে কোটা আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে বাতিল হওয়া সরকারের পরিপত্র পুর্নবহালের দাবি করেছে। তবে এটি পুনর্বহালের ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগের। হাই কোর্টের আদেশ রাস্তার আন্দোলনে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নাই। রাস্তায় আন্দোলন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে, সেই সুযোগ হয়ত আছে। পরিপত্র বাতিলের কারণে সায়মিকভাবে কিছু ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আন্দোলনে নামার পেছনে যৌক্তিকতা থাকতে পারে। রায় পরিবর্তন করতে হলে সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিলও করেছে, আইনি লড়াই শুরু করেছে। তখন সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেল। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগও করেছেন, সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্তও হয়েছে।
রাস্তা বন্ধ করলে যৌক্তিক কাজটি করার ঘোষণা হারুনের : সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে মানুষের চলাচলে বাধা দিলে আইন অনুযায়ী যেটা যৌক্তিক সেটা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। আন্দোলনকারীদের আদালতের আদেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, আইন আমাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে আমরা সেটাই করব।