কাটেনি ৮৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনিশ্চয়তা

দুই বছর ধরে বন্ধ থাকা পুরনো ডাটাবেজের লাইসেন্স নিয়ে সিদ্ধান্ত মিলেনি ।। নতুনদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনের খবরে আগেভাগে গাড়ির ডকুমেন্ট হালনাগাদ কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে এসেছেন তারা। তাদের অনেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করাতে, কেউ গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করাতে, কেউবা এসেছেন নতুন নাম্বার প্লেট লাগাতে। সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহীতাদের। যাদের অনেকে ঘুরছেন দুই মাস থেকে দুই বছর ধরে। গতকাল দুপুরে বিআরটিএ প্রাঙ্গণে নিজের দুর্ভোগের কথা জানালেন নগরীর চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা আবুল হাশেম। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছিলাম। দেড় বছর হয়েছে, এখনো অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ওখানে তারিখ পাল্টাতে পাল্টাতে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। লাইসেন্সের খবর নেওয়ার জন্য অনেকবার এসেছিলাম। আজও এসেছি। কিন্তু কেউ আশার বাণী দিতে পারেনি।
বিআরটিএ বলছে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট। পুরনো সার্ভারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া চট্টগ্রামের ৮৫ হাজার লাইসেন্স গ্রহীতা রয়েছেন, যাদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে নতুনদের জন্য সুখবর দিয়েছে বিআরটিএ। নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় মাস ধরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া শুরু করেছে। যাদের অনেকে কাল-পরশুর মধ্যে লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তি তিন বছরের মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সাথে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএর।
এর মধ্যে নতুন স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর জন্য ২০১৯ সালের শুরুতে নতুন করে ভেন্ডর নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে বিআরটিএ। অভিযোগ ওঠে, একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে কয়েক দফা টেন্ডার কার্যক্রমের তারিখ পেছানোর কারণে ঠিকাদার নিয়োগ বিলম্বিত হয়েছে। তাই সারা দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট কার্যক্রম থমকে গেছে। স্মার্ট কার্র্ড সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিআরটিএ। এতে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়নের জন্য আবেদন করা লোকজনের ভোগান্তির অন্ত নেই। তবে গত মার্চ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার কাজ শুরু করেছে নতুন ভেন্ডর ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয়। পাঁচ বছরে ৪০ লাখ লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রামেও গত ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. ইব্রাহীম খলিল আজাদীকে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট নিয়ে জটিলতা কেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন ভেন্ডর তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতে ডাটা সেন্টারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হচ্ছে। লাইসেন্স প্রিন্টও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে যারা প্রথমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন তাদের অনেকে কাল-পরশুর মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। পুরো ডাটাবেজের বিষয়ে মুখ খুলেননি তিনি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পুরনো সার্ভারে চট্টগ্রামের ৮৫ হাজার লাইসেন্সের তথ্য রয়েছে, যেগুলো এখনো প্রিন্ট হয়নি। এ সার্ভার নতুন ভেন্ডরকে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। তবে কখন, কীভাবে পুরনো সার্ভার নতুন ভেন্ডরকে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
তিনি বলেন, করোনার কারণে সীমিত আকারে লকডাউন শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনের খবরে আজ (গতকাল) মানুষের ভিড় জমেছে। বিআরটিএতে আজকের মতো আগে কখনো এত মানুষ দেখা যায়নি। প্রায় সবাই এসেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্সের খবর নিতে। তাদের কোনো আশা দিতে না পেরে আমরাও হতাশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীর দুটি, চট্টগ্রামের একটিসহ ১০ প্রকল্প বাতিল