উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকলে ঠিকাদারকে বিল দেয়া হবে না, পাশাপাশি আনা হবে শাস্তির আওতায়ও। এছাড়া প্রকল্পের কাজে কেউ অবৈধ লেনদেন করলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি গতকাল বুধবার ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে এসব কথা বলেন। টাইগারপাস নগর ভবনে এ বৈঠক হয়েছে।
ডা. শাহাদাত ইমেডিয়েটলি সমস্ত প্রকল্পগুলো ভিজিট করে রাস্তার মালামাল ও কোয়ালিটি টেস্ট করার জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আপনারা যারা যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের বিল দিয়ে দেয়া হবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পানিশমেন্টের আওতায় আনা হবে। এখানে আমি কোনো ছাড় দিতে রাজি না। জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদেরকে কিন্তু আমরা পানিশমেন্টের আওতায় আনব। এটাতে আমি কোনো ছাড় দিব না। কাজেই আপনারা কোয়ালিটির দিক দিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করেন। আজ থেকে কাজ শুরু করেন, কাজ বন্ধ রাখবেন না।
তিনি বলেন, এ শহর আমার আপনার সবার। এখানকার রাস্তা দিয়ে আমার পরে আমার ছেলে–মেয়েরা হাঁটবে, আত্মীয়–স্বজন হাঁটবে, নেঙট জেনারেশন এ পথ দিয়ে হাঁটবে। তাই কাজের কোয়ালিটি শতভাগ ঠিক রাখতে হবে। এমন ভাবে রাস্তাটা করতে হবে যাতে বছরের পর বছর একটা উদাহরণ হিসেবে সবাই বলতে পারে যে এই রাস্তাটা অমুক প্রতিষ্ঠান করেছে।
বৈঠকে নগরীর প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে ফুটওভার ব্রিজ না হওয়া প্রসঙ্গে এলে মেয়র বলেন, আপনারা ফুটওভার ব্রিজের কথা বলছেন। ফুটওভার ব্রিজের বাস্তবতা নিরীক্ষা করে ১৭টা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে দেওয়া হবে এবং সব কাজ দ্রুত শেষ করে আমি কিছু দৃশ্যমান রেজাল্ট জনগণকে দেখাতে চাই।
বৈঠকে ঠিকাদাররা কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বের কাউন্সিলররা ঘুষ নিতেন এবং ঘুষ না দিলে মেয়র–কাউন্সিলর মিলে কাজে বাধা সৃষ্টি করতেন অভিযোগ করেন। এসময় মেয়র বলেন, আপনারা কেউ কোনো টাকা ঘুষ হিসেবে কাউকে দিবেন না। কোন কোন কাউন্সিলর আগে আপনাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বললেন। আপনারা এটার তালিকা দিন। যদি কোনো কর্মকর্তা আপনাদের কাছে টাকার ডিমান্ড করে সরাসরি আমাকে জানাবেন, তাকেও পানিশমেন্টের আওতায় আনবো। এখানে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা সরাসরি কাজ করবেন, ভালো কাজ করবেন এবং এই ভালো কাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরকে আপনারা সুন্দর করে তুলবেন এবং একটা পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করবেন। রাস্তা যখন আপনারা করতে যাবেন সুযোগ থাকলে, প্রয়োজন থাকলে রাস্তার পাশে ডাস্টবিন করে দিবেন, গাছ লাগাবেন। নগরীর উন্নয়নে ইনোভেটিভ কিছু করার চেষ্টা করেন।
বৈঠকে ঠিকাদাররা দ্রুত বকেয়া বিল প্রদানের দাবি জানান। এছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় পূর্বে যেসব ঠিকাদার কাজ করতে পারেননি বা কাজ করলেও বিল ঠিকমতো পাননি তাদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমেই সড়ক সংস্কার ও নির্মাণের উপযুক্ত সময় বিধায় চসিকের পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের সহযোগিতার দাবি জানান তারা। অন্যান্য সেবা সংস্থার কারণে সড়ক নির্মাণ বা নবনির্মিত সড়ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সমন্বয় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ঠিকাদাররা।
এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, প্রকল্পের পিডি মো. আনিসুর রহমান।