কাজী ইমদাদুল হক (১৮৮২–১৯২৬)। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর খুলনা জেলার গোদাইপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কাজী আতাউল হক প্রথমে আসামে জরিপ বিভাগে চাকরি করতেন, পরে খুলনার ফৌজদারি আদালতে মোক্তার হন। ইমদাদুল হক ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর দীর্ঘকাল পরে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। ইমদাদুল হক ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসায় অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আসামের শিলং–এ শিক্ষা বিভাগের উচ্চমান সহকারী হন। পরের বছর তিনি ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে ভূডেখ্রষ্টাব্দের অধ্যাপক, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল–পরিদর্শক এবং ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের প্রথম কর্মাধ্যক্ষ হয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল ছিলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ইমদাদুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় শিক্ষাবিষয়ক মাসিক পত্রিকা শিক্ষক। পত্রিকাটি তিন বছর চালু ছিল। তিনি কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিক্ষা ও নীতিমূলক শিশুসাহিত্য রচনায় খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: আঁখিজল (১৯০০), মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা (১৯০৪), ভূগোল শিক্ষা প্রণালী (দু ভাগ, ১৯১৩, ১৯১৬), নবীকাহিনী (১৯১৭), প্রবন্ধমালা (১৯১৮), কামারের কাণ্ড (১৯১৯) ও আবদুল্লাহ (১৯৩২)। আবদুল্লাহ উপন্যাসের লেখক হিসেবেই তাঁর সমধিক পরিচিতি। এতে তৎকালীন মুসলিম সমাজের নানা দোষত্রুটি অতিশয় দক্ষতার সঙ্গে তিনি তুলে ধরেন। বাঙালি মুসলমান সমাজের কল্যাণসাধন ছিল ইমদাদুল হকের সাহিত্য সাধনার মূল লক্ষ্য। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা (১৯১৮) প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। অত্যন্ত যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করায় সরকার তাঁকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘খান সাহেব’ এবং ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।