জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রামে গরিবের আবাসনে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে। ‘চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার কিসমত জাফরাবাদ মৌজায় নিম্ন ও মধ্যআয়ের লোকদের জন্য সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্পের’ মাটি ভরাট দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারকে পুরো বিল হিসেবে এক কোটি ৯৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও কাজের ২০ শতাংশ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালের সংগঠিত ঘটনাটি নিয়ে বর্তমানে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘটনায় জড়িত গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে জানতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইদ রেজার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা দেওয়ার পর তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হক মোতায়েদের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কিসমত জাফরাবাদ মৌজায় মাটি ভরাট উন্নয়ন প্রকল্পের পুরো বিল ঠিকাদারকে যোগসাজশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। এমন একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের আজ রোববার চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। ওই প্রকল্পে মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসনের ফ্ল্যাট বানানোর জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং নির্মাণের কথা ছিল। প্রকল্পে মাটি ভরাটের পুরো কাজের বিলের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কিন্তু কাজ হয়েছে এক পঞ্চমাংশের কম।
মীরসরাই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মো. এমরান উদ্দীন আজাদীকে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রথম দিকে আমাদের ওই প্রকল্পের একটি প্রসপেক্টাস দিয়েছিল। গরিব ও মধ্যআয়ের মানুষের আবাসনের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। কয়টি ফ্ল্যাট হবে সেটি জানি না। তিনি বলেন, ওখানে কাজ বন্ধের আগে কিছু মাঠি ফেলা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, কাজ না করে পুরো প্রকল্পের এক কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করার একটি অভিযোগ প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অনুসন্ধান করছে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর এক উপসহকারী পরিচালক। কাজ না করে বিল পরিশোধের ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সামশুল আলমকে পদাবনতি দিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হন ওই সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার মোর্শেদও। প্রকল্পটির টেন্ডার আহ্বানের সময় সামশুল আলম চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন। তখন চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন মো. নাছিম হোসেন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এই তিন কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে ঘটনাকালীন চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা কাওছার মোর্শেদকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মিলেনি। ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা সামশুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে লাইন কেটে দেন। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।