শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী (১৯৩২–২০১৪)। কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক রুচিশীল নির্মাতা। আমাদের বই–পত্র–পত্রিকার অবয়বকে যিনি দৃষ্টিনন্দন করেছেন, যাঁর নন্দিত হাতের জাদুতে শিল্পের নানা শাখায় এসেছে আন্তর্জাতিক মান। প্রচ্ছদ শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ই মার্চ ফেনীতে। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। চাকরিসূত্রে বাংলাদেশের নানা মহকুমা ও জেলায় বাস করেছেন সপরিবারে। কাইয়ুমও ঘুরেছেন নানা জায়গায়, পড়েছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। তাঁর শৈশব–কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নড়াইল, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, ফেনী, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাংলার প্রকৃতি ও তার বৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটে কাইয়ুমের। ময়মনসিংহ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কাইয়ুম চৌধুরী গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিলো তাঁর। ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের কাছ থেকে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের পথিকৃৎ শিল্পীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, দৈনিক পত্রিকার ব্যানার হেডিং, মাস্টার হেড সহ বিভিন্ন সাময়িকীর অলংকরণে তাঁর ভূমিকা অনন্য। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চারুকারু শিল্পী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ২৯ বার শিল্পকলা একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাশনাল বুক সেন্টার আয়োজিত প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে পেয়েছেন স্বর্ণপদক।
এছাড়াও তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, সুফিয়া কামাল পদক, আলতাফ মাহমুদ পদক সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।