কাঁঠাল দিয়ে মুখরোচক জ্যাম, চাটনি, আচার, কাঁঠালসত্ত্ব, চিপসসহ ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের একদল গবেষক এসব পণ্য তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের মৌসুমে প্রাপ্ত ফলকে প্রক্রিয়াজাত করে কোটি কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে এবং নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় এক দল গবেষক কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করে নানা ধরনের মুখরোচক পণ্য উৎপাদনের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন। ইতোমধ্যে ১২টি প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসব পণ্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কাঁঠালের জ্যাম, আচার, চাটনি, চিপস, কাটলেট, আইসক্রিম,
দই, ভর্তা, কাঁঠালসত্ত্ব, রেডি টু কুক কাঁঠাল, ফ্রেশকাট পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যগুলো ঘরে রেখে সারা বছর খাওয়া যাবে। কর্মশালায় জানানো হয়, কাঁঠাল থেকে এসব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ৫০০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। একই সাথে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতি বছর নষ্ট হয়ে যাওয়া অন্তত ৫শ কোটি টাকার কাঁঠালকে কাজে লাগানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কর্মশালায় নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের মার্কেটিং ও সাপ্লাই চেইন বিষয়ক পরামর্শক অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, নিউভিশন কোম্পানি চট্টগ্রামসহ দেশের আটটি জেলা ও অন্যান্য উপজেলা শহরগুলোতে কাঁঠালের তৈরি পণ্যগুলোর বিপণনের কাজ করছে।
নিউভিশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (রিসার্চ) আতিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জেলা–উপজেলায় কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরির কাজে বিএআরআই ও নিউভিশন যৌথ প্রয়াসে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ২৫০ জন উদ্যোক্তা গঠনে সক্ষম হয়েছে। উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য প্রকল্পের আওতাধীন জেলা–উপজেলাগুলোর বিভিন্ন সুপারশপ ও মাঝারি ধরনের ডিপার্টমেন্টাল শপে পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুল হক খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাস। তিনি বলেন, কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। এজন্য কৃষক পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণায় উদ্ভাবিত পণ্যগুলোর তৈরি কৌশল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া পণ্যগুলো প্যাকেটজাত ও মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে ভোক্তাদের মাঝে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিভিন্ন কৃষিজ দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য আমাদের দেশেই উদ্ভাবন করতে হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি। এতে করে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও উদ্যোক্তা উভয়েই লাভবান হবে এবং কৃষিজ দ্রব্য পচে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোফাজ্জাল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশীদ। উপস্থিত ছিলেন নিউভিশন সলিউশন্স লিমিটেডের প্রকল্প ম্যানেজার কাইজার–ই–আলম, চট্টগ্রাম বিসিকের উপ–ব্যবস্থাপক তানিজা জাহান, চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মাধবী বড়ুয়া প্রমুখ।