কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে শপথ নিতে হবে

আজ মহান বিজয় দিবস

| সোমবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বাঁধভাঙা আনন্দের দিন আজ। মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের দিনটি আজ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। প্রায় ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল এই মহেন্দ্রক্ষণ। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এইদিনই বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল লালসবুজের পতাকা। পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশ। বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হল আজ। এ উপলক্ষে সকল শহীদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এ ভূভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। বাঙালির সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস মহান স্বাধীনতা। অত্যাচারনিপীড়নে জর্জরিত বাঙালি জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খোলার অকৃত্রিম প্রয়াস। তাই গৌরব ও অহঙ্কারের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিকে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার লক্ষ্যে নতুন শপথে বলীয়ান হতে হবে।

মহাকবি মিল্টন বলেছিলেন,‘স্বাধীনতা মানুষের প্রথম এবং মহান একটি অধিকার’। কিন্তু স্বাধীনতাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে হলে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সমাজের আবশ্যকতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। স্বাধীনতার চেতনার একটি ছিল বৈষম্যের অবসান। তদানীন্তন শাসকচক্র আমাদের সরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদ ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করেছে শুরু থেকেই। তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ, অবিচার, নির্যাতননিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনার ফলে আমরা নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ফলে পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে একটা গণঅসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়। এতে মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে ওঠে।

এবারের বিজয় দিবস অন্য সময়ের বিজয় দিবস থেকে আলাদা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জিতে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার দিন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে পতাকা উড়িয়েছিলাম সেখানে পুরো বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ছিল। কালক্রমে ওই ডিজাইনটার বদলে লাল সূর্যটা সবুজের বুকে স্থাপিত হওয়ার পর পতাকাটা ২০২৪এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় যখন বিপ্লবীদের কপালে ফেট্টির মতো জড়ানো থাকল তখন যেন সেটি নতুন প্রাণ পেল। তাঁরা বলেন, যেখানে অন্যায়, সেটা ঠেকানোই মুক্তিযুদ্ধের প্রবহমান চরিত্র। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়মনোবাক্যে চাইতাম দেশটা কখন স্বাধীন হবে। একটা মহা আবেগের ফসল হলো দেশের জন্ম। কিন্তু আমরা সহসা বুঝলাম আবেগ দিয়ে দেশ স্বাধীন করা যায় ঠিক, কিন্তু আবেগ দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না। ঠিক যেমন ক্রিকেট খেলায় দর্শকরা পতাকা নাড়িয়ে গ্যালারি দেশপ্রেমের আবেগে ভরিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু খেলার মাঠে জিততে গেলে লাগে স্কিল এবং পারফরম্যান্স। সে জায়গায় ঘাটতি থাকলে শত আবেগেও মাঠে জেতা সম্ভব নয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা যখন দীর্ঘ পনেরো বছরের সরকারকে হটিয়ে দিল, তখন ওই আবেগের ক্ষেত্রে নতুনভাবে প্রশ্নটা উঠল। কারণ সে জুলাই ৩৬এর আবেগটা ছিল বিন্দু থেকে সিন্ধুতে রূপান্তরিত হওয়া একটি মহা আবেগ, যার সামনে মহাশক্তিধর একটি স্বৈরশাসনপ্রবণ সরকার খড়কুটোর মতো ভেসে গেল। তবে এই মহাশক্তিধর সরকার পতনের প্রথম কারণটি ছিল বাকস্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে ভোটাধিকার হরণ।

আজকের এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষকশ্রমিকপেশাজীবীছাত্রজনতাতাদের শ্রম, মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে, তা নয়; তারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।

তাই আমাদের জীবনজীবিকার সংগ্রাম নিরলসভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এ কাজে নিয়মশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য। আইনশৃঙ্খলার অভাব এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। আইনের চর্চা ন্যায় বিচারকে নিশ্চিত করে সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের দায়িত্ব পালন নিরপেক্ষনির্বিঘ্ন করে। কোন ক্রমে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করলে মানুষ অধিকার হারায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে