বোর্ড অন টাইম মেসিন: মিডিয়া কর্মী কণিকা সুলতানা। চৌকস, প্রিয়দর্শিনী। কাজ করে একটি কর্পোরেট মিডিয়া হাউজে। হাউজটি পৃথিবীর সব দেশ ও অঞ্চলে অন্তত ৫০ ভাষায় তাৎক্ষণিক খবর প্রচার করে। প্রকৃতি, পরিবেশ, পর্যটন, সমুদ্র, অর্থনীতি, খেলা, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি, রঙ্গ-ব্যাঙ্গ, কর্পোরেট বাণিজ্য, রাজনীতির অন্দর-সদর, যোগাযোগ, মহাকাশ, সমুদ্রতট ও তল, কার্টুন, কমিঙ, সুরক্ষা, গৃহস্থালিসহ হাউজটির আছে আরো দু’ডজনের বেশি চ্যানেল। এটা মধ্যমানের মিডিয়া হাউজ। আরো অত্যাধুনিক অসংখ্য মিডিয়া হাউজ আছে দেশে।
অতিমারি দুর্যোগ থাবা গুটিয়েছে মাত্র এক যুগ আগে। এরমাঝে প্রকৃতি পৃথিবীকে ঝাড়পোঁছ করে সবকিছু নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের অন্য সব দেশের সাথে তাল রেখে প্রযুক্তির পাশাপাশি পুরোই মানবিক ও মেধানির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। হৈ-হুল্লোড় নেই। হুজুগ, গুজব, মূর্খতা, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ফেনাও নেই। যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও চর্চা ছাড়া কারো টিকে থাকা অসম্ভব। রাজনীতিও ফোর টায়ার প্রক্রিয়ায় শোধিত হয়ে নেতৃত্ব উঠে আসছে। প্রাথমিক স্তরে মানবিক গুণ, মেধা, দক্ষতা, প্রযুক্তি জ্ঞানে ঋদ্ধ হয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হয়। এরপর আরও কঠিন ধাপ একের পর এক পার হতে হয়। প্রতিটি ধাপে যারা সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে পার হয়ে আসেন, তারাই পয়েন্টের ভিত্তিতে নেতার পদ লাভ করেন। তারাই দেশ, সরকার ও প্রশাসন চালান। বৃটিশের তৈরি আমলাতন্ত্রসহ পুরানো ঔপনিবেশিক সব লেজুড় মুছে ফেলা হয়েছে। সবখানেই উপরে উঠতে হলে মানবিকতা, যোগ্যতা, দক্ষতাই শেষ কথা।
২০২১ সালের বাংলাদেশ এর তুলনায় ২০৪৫ সালের বাংলাদেশ একেবারেই অচেনা। তখন শঠতা, তোষামোদ, চাটুকারিতা, মিথ্যা, ভন্ডামি, ঘুষ, দুর্নীতি, ছিল উপরে উঠার সিঁড়ি। এসব অভ্যাসে দক্ষ ও কুশলীরা তখন রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সমাজের প্রতিটি সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নেয়। অতিমারি করোনার ভয়াল বিস্তারের সাথে প্রকৃতির প্রতিশোধ তা রুখে দেয়। অসংখ্য মানুষের অবিশ্বাস্য মৃত্যু বোধ ও বিবেকের জাগরণ ঘটায়। এই জাগরণের প্রতিনিধি কণিকা সুলতানা। কণিকা নিজের এয়ার স্কুটি হাঁকিয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে উড়ে বেড়ায়। তার আহরিত খবর কমিঙ সিরিজে রূপান্তরিত হয়ে সারা বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেন্দ্র চলে এসেছে। তাঁর পেশাগত দায়িত্বের মূল বিষয় “বহুরূপে মানবিকতা।”
“ল্যান্ডিং ২০২১”: আমাদের কল্পিত কণিকার মা রিফাত সুলতানা। ‘৭১ টেলিভিশনের সহযোগী প্রযোজক। বাবা নাজমুল ইসলামও একই চ্যানেলের কর্মী। মাত্র ৩২ বছর বয়সে রিফাত সুলতানাকে তুলে নেয় কোভিড-১৯। কী অসহনীয়, অবর্ণনীয় মৃত্যু! কণিকা তখন মায়ের পেটে সাত মাসের খুদে মাংসপিণ্ড মাত্র। করোনা আক্রান্ত হয়ে মা-বাবা দুজনই সপ্তাহ আগে ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় রিফাত সুলতানাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এই অবস্থাতেই সিজারিয়ান করে কণিকাকে পৃথিবীর আলো বাতাসে আনা হয় ১৬ এপ্রিল শুক্রবার সকালে। কণিকাকে রাখা হয়, এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল নিউনেটাল ইউনিটের ইনকিউবেটর খোপে। ওদিন বিকালেই মা রিফাত সুলতানা চলে যান, পরপারের ডাকে। বাবা নাজমুল ইসলাম কিছুটা সুস্থ হলেও কেমন ভাগ্য কণিকার! রিফাত সুলতানা দম্পত্তির ঘরে দু’বছর বয়সী আরও দু’যমজ শিশু রয়েছে। কেমন মৃত্যু এটা! অবোধ দুু’ অসহায় শিশু এবং অসময়ে জবরদস্তি পৃথিবীতে আনা কণিকাদের কী দোষ ছিল? কেন স্রষ্টার এমন পরীক্ষা! হায় কোভিড-১৯, তুমি নিয়তির মত হাজির হয়েছ, ঘরে ঘরে- পৃথিবীজুড়ে। তোমার প্রথম প্রবাহ বা ধাক্কা দেশ সামলে উঠার আগেই হঠাৎ দ্বিতীয় ধাক্কা! দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। রেকর্ড বাড়ছে আরও দ্রুত। যারা অকালে অসময়ে হারিয়ে যাচ্ছেন তারাওতো রেখে যাচ্ছেন কণিকাদের মত অসংখ্য কুসুম কলি। এটা আমার-আপনার সব পরিবারে ঘটছে, ঘটতে পারেই। ভাবুনতো, এমন পৃথিবী আমরা কী চেয়েছি? আমরা কী আরও বেশি-বেশি সতর্ক হবো না?