বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপে কলম্বিয়া সমপ্রতি বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করেছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো আইন ২৪৪৭ স্বাক্ষর করেন, যা ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেয় না। এই আইনটি কলম্বিয়ার সাংবিধানিক আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর হয়, যেখানে ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেওয়া সংবিধান বিরোধী ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিশ্বের অনেক দেশে বাল্যবিবাহ কেবল আইনগত নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কলম্বিয়ায় এটি শুধু কাগজে লেখা আইন নয়; এটি শিশুদের স্বপ্ন, শিক্ষা এবং নিরাপত্তার প্রতি একটি সামাজিক প্রতিশ্রুতি। এই পদক্ষেপ বিশেষ করে আদিবাসী, আফ্রো–উৎপন্ন ও দূরবর্তী সমপ্রদায়ের মেয়েদের জন্য আশা জাগাচ্ছে।
বাংলাদেশে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন রয়েছে, তবে বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সংস্কৃতির কারণে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে ‘শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন’ পাস করা হয়, যা মেয়েদের জন্য বাল্যবিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ নির্ধারণ করে। তবে, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ ১৮ বছরের আগে বিবাহিত।
ভারতে, ‘শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন, ২০০৬’ অনুযায়ী, মেয়েদের জন্য বাল্যবিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সংস্কৃতির কারণে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে রায় দিয়েছিল যে, ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহিত করলে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে।
পাকিস্তানে, ‘শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন, ১৯২৯’ অনুযায়ী, মেয়েদের জন্য বাল্যবিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৬ এবং ছেলেদের জন্য ১৮ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, বাস্তবায়ন এবং সামাজিক সংস্কৃতির কারণে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০২৫ সালে, ইসলামাবাদে ‘শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন’ পাস করা হয়েছে, যা ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেয় না।
অস্ট্রেলিয়ায়, ‘শিশু বিবাহ’ আইন অনুযায়ী, ১৬ এবং ১৭ বছর বয়সী মেয়েরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিবাহ করতে পারে, তবে ১৬ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেয় না। অস্ট্রেলিয়ায় বাল্যবিবাহকে ‘বাধ্যতামূলক বিবাহ’ এবং ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে, বাল্যবিবাহের আইন রাজ্যভিত্তিক। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৬টি রাজ্যে ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেয় না, তবে ৩৪টি রাজ্যে বাল্যবিবাহ বৈধ। ২০২৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন’ পাস করা হয়েছে, যা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফলত দেখা যায় যে, অসংখ্য দেশে এখনো ‘বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ’ নিয়ে যথেষ্ট যুদ্ধই বাকি রয়েছে কেননা অনেক উন্নত দেশে এখনো বাল্যবিবাহকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ কিংবা নির্মুল করা সম্ভব হয়নি।