কলম বিরতিতে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে

চট্টগ্রাম কাস্টমস । আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত, বন্দরের কন্টেনার জট বাড়ার আশঙ্কা আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ২৬ জুন, ২০২৫ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে আমদানিরপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাসও। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিতে না পারায় আমদানিকারকদের গুণতে হচ্ছে পোর্ট ডেমারেজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল চট্টগ্রাম কাস্টমসে সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কাজ হয়। বাকি ৫ ঘণ্টা শুল্কায়নসহ সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ বাতিলের আন্দোলনে ঐক্য সংস্কার পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেএনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ, ইতোমধ্যে জারিকৃত ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ সব বদলি আদেশ প্রত্যাহার, নিপীড়নমূলক নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি বন্ধ করা এবং এনবিআর বিলুপ্ত না করে বরং বিভাগের মর্যাদায় শক্তিশালী করাসহ রাজস্ব অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর লক্ষ্যে রাজস্ব অধ্যাদেশ সংস্কার বিষয়ক কমিটি বাতিল করে আন্দোলনরত সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করা। এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান। তবে অর্থ উপদেষ্টার সেই আহ্বান প্রত্যাখান করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গতকাল এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়দাবি আদায়ে আগামী ২৮ জুন থেকে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনের পাশাপাশি মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করা হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কয়েকজন সেবাগ্রহীতা বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা মাঝখানে ভোগান্তিতে পড়ছি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের তো এখানে কোনো লোকসান নেই। তারা বহাল তবিয়তে থাকবেন, বেতনও চলছে। এখন তো নতুন করে আমাদের ওপর চারগুণ পোর্ট ডেমারেজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন যে আমরা যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারছি না, এখানে আমাদের দায় কোথায়? আমরা কি লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবো? এভাবে কলম বিরতি পালন না করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উচিত, তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দাবি দাওয়ার বিষয় থাকলে সেটি সমাধান করা। ওনাদের কারণে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ছি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পণ্য আমদানিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং রপ্তানিতে ৫ হাজার বিল অব এঙপোর্ট দাখিল হয়। কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে চার ভাগের একভাগ কাজও হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে আমাদের এখানেও কলমবিরতি পালিত হচ্ছে। কলমবিরতির কারণে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে এটি ঠিক।

এদিকে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ এর খসড়ায় কর্মকর্তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বিভাগ দুটিতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের জন্য পদ সংরক্ষিত না রেখে রাজস্বের কাজে অভিজ্ঞতা নেই এমন কর্মকর্তা পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে একদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞ নয় এমন কর্মকর্তা পদায়নের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা, গতিশীলতা এবং কার্যকারিতা বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে এনবিআরে কর্মরত দুটি ক্যাডারের কাজের ক্ষেত্র ও পদোন্নতি সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৫ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিচতলাও এখনো পুরোদমে চালু হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক তিন এমপিসহ ১০ জনকে শোন এরেস্ট দেখানোর নির্দেশ