পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করেছে। বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার শুনানির প্রথম দিনে আদালত বলেছে, ঘটনা জাতির বিবেককে স্তম্ভিত করেছে। ঘটনার তদন্ত চালানো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সমালোচনাও করেছে আদালত। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ঘটনায় একটি ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ) গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
সেই টাস্ক ফোর্সে থাকবেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তারা। দেশজুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী কী করণীয় তা নিয়ে পরামর্শ দেবে টাস্ক ফোর্স।
ভারতজুড়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে আগামী তিন সপ্তাহে অন্তবর্তী রিপোর্ট দেবে এই জাতীয় টাস্ক ফোর্স। এরপর আগামী দুমাসের মধ্যে জমা হবে চূড়ান্ত রিপোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে এদিন বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে কলকাতা পুলিশ এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন প্রথমে এফআইআর করেননি, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। কী ভাবে হাসপাতালে ভাঙচুর হল, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ঘটনাটি যে খুন, তা স্পষ্ট। গত ৯ অগাস্ট পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সরকারি আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে ৩২ বছর বয়সী নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় শিক্ষানবীশ ওই চিকিৎসক ঘটনার শিকার হয়। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সঞ্জয় রায় নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আরজি করের ঘটনায় রোববার স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের মামলাটি ওঠে শুনানির জন্য।শুনানিতে কেবল সন্দীপের বা আরজি কর কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় নয়, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে কেন সঠিক ভাবে এফআইআর করা হয়নি? প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। পুলিশ সেই সময় কী করছিল, জানতে চান তিনি। আরজি কর কাণ্ডে গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই–কে স্টেটাস রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে গোটা ভারত। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ পথে নেমেছেন এই ঘটনার প্রতিবাদে। অপরাধীর শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে রাজ্যবাসী। চিকিৎসকদের শুরু করা বিক্ষোভ এখন গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আন্দোলন মঙ্গলবার একাদশতম দিনে গড়িয়েছে।