কলকাতাতো নয় যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলকাতা থেকে | রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

কলকাতা শহরের মারকুইস স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট কিংবা শ্যাম বাজার, বড় বাজার। এসব বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। কারণ চিকিৎসা কিংবা ব্যবসা বা ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষ সবচাইতে বেশি থাকে এই এলাকায়। তাই এই এলাকায় গেলেই চট্টগ্রাম কিংবা দেশের অন্য যেকোন অঞ্চলের মানুষের দেখা মিলবেই। চট্টগ্রাম কিংবা দেশের অনেক মানুষ এসব এলাকায় আবার ব্যবসা বাণিজ্যও করছে। তাই এই সব এলাকায় বাংলাদেশে থেকে যাওয়া মানুষদের বেশ পছন্দের জায়গা। তাই সহসা এই সব জায়গায় বাংলাদেশের মানুষের দেখা মেলে। কিন্তু গত কয়দিন ধরে এইসব এলাকায় বাংলাদেশের মানুষ যেন গিজ গিজ করছে। পা বাড়ালেই বাংলাদেশের মানুষের দেখা মিলছে। খাবারের দোকান গুলোতে বাংলাদেশের মানুষের উপছে পড়া ভিড়। কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। খাবারের দোকান গুলোতে লম্বা লাইন দিয়ে আছে খাওয়ার জন্য। এসব এলাকায় আবার বাংলাদেশের মানুষের পছন্দের সব খাবার পাওয়া যায়। তাই নানা স্বাদের খাবার খেতে এখানে সবাই ছুটছে।

অন্তত গত দুদিন ধরে কলকাতা শহরের এই অবস্থা দেখে বুঝার কোন উপাই নেই এটা কলকাতা নাকি বাংলাদেশ। কলকাতার ভাষাও বাংলা। তবে বাংলাদেশের ভাষার চাইতে বেশ ভিন্ন। তাই সহজেই অনুমান করা যায় বাংলাদেশ থেকে কারা এসেছে। কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষের এই ঢল নামার সবচাইতে বড় কারন বিশ্বকাপ। ক্রিকেট বিশ্‌্বকাপের দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল এই কলকাতায়। যার একটি গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরেকটি ম্যাচ হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। এই দুটি ম্যাচ দেখতে বাংলাদেশের মানুষ দলে দলে ঢুকছে কলকাতায়। আর সে সাথে চিকিৎসা কিংবা ব্যবসার কাজতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে কলকাতা যেন এখন এক খন্ড বাংলাদেশ। কলকাতার একটি বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় এলাকা হচ্ছে নিউমার্কেট এলাকা। এই এলাকাটিতে গত দুই দিন বাংলাদেশের মানুষ ছাড়া আর কাউকে বলতে গেলে তেমন দেখাই যায়নি। যেদিকে যাবেন আর তাকাবেন কেবলই বাংলাদেশের মানুষ। কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষের সবচাইতে পছন্দের একটি জায়গা শ্রী লেদার। এই দোকানটির জুতা কেনেনা তেমন বাঙ্গালী খুব কমই পাওয়া যাবে। দামে সস্তা এবং টেকসই বলেই কিনা এই দোকানেও ভীড় থাকে বাংলাদেশের মানুষের। কলকাতার এই এলাকায় হাটলে দেখা যাবে বাংলাদেশের সব মানুষের হাতে অন্তত একটি শ্রী লেদারের প্যাকেট। এবারের বিশ্বকাপে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ যেমন ধর্মশালা, চেন্নাই, পুনে, মুম্বাইতে খেলে বাংলাদেশ দল এখন কলকাতায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থখদের অনেকেরই ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও অন্য প্রদেশ গুলোতে গিয়ে খেলা দেখা সম্ভব হয়নি। তাই সবার লক্ষ্য ছিল কলকাতা। আর সে সুযোগে কলকাতার আবাসিক হোটেলও গুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুন। অনেককেই দেখা গেছে একটি হোটেল রুমের জন্য ব্যাগ হাতে ঘুরতে। কলকাতায় বাংলাদেশের খেলার ভেন্যু ইডেন গার্ডেন। ক্রিকেটের নন্দন কানন সেই ইডেনকেও গতকাল রাঙিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষরা। ইডেনের পাশেই কলকাতা মোহামেডান ক্লাব। আর সে মোহামেডান ক্লাবেই করা হয়েছে টিকিটের বুথ। আগের দিন থেকে মোহামেডান ক্লাবের মাঠে বাংলাদেশের মানুষের ভীড়। লক্ষ্য টিকিট সংগ্রহ করা। অনেকেই আগেই অন লাইনে টিকিট কিনে রেখেছিল। কলকাতায় গিয়ে সে টিকিটের মুল কপি সংগ্রহ করেছে। আবার অনেকেই ক্রয় করেছেন বুথ থেকে। ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর দুইটায় শুরু হয় খেলা। বেলা ১২ টায় স্টেডিয়ামের গেইট খোলা হয়। কিন্তু তার আগে থেকেই বাংলাদেশের দর্শকরা স্টেডিয়ামের দিকে ছুটতে থাকে। ৬৬ হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ইডেন গার্ডেনে গতকাল হাজার বিশেক দর্শক খেলা দেখেছে। যার প্রায় সবাই বাংলাদেশের। তাইতো যখনই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় তখনই গ্যালারী যেন গর্জে উঠে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যখন মাঠে নামে তখনই গর্জে উঠে। বাংলাদেশের বোলাররা যখনই উইকেট নিয়েছে তখনই ইডেন কাঁপিয়েছে এই বঙ্গ সন্তানরা। বাংলাদেশ দলের জার্সি, নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন আর নানা সাজে সজ্জিত হয়ে বংলাদেশের মানুষ এসেছিল ইডেনে।

মনে হচ্ছিল যেন ঢাকার মিরপুর কিংবা চট্টগ্রামের সাগরিকায় খেলা হচ্ছিল। আর কলকাতা যেন পরিনত হয়েছিল ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম। কলকাতায় খেলা দেখতে আসাদের মধ্যে চট্টগ্রামেরও অনেকেই রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরুন কাউন্সিলরদের একটি বিশাল বহর এসেছে কলকাতায় খেলা দেখতে। কল্লোল দাশ, সাইফুল আলম খান, রায়হান উদ্দিন রুবেল, কাজি জসিম উদ্দিন, এনামুল হক, সোহেল আহমেদ, আবুল হাশেম রাজা, আবু মোরশেদ, সাবেক ক্রিকেটার তৌফিকুল ইসলাম বাবু সহ অনেকেই এসেছেন।

চট্টগ্রাম মোহামেডানের সহ সভাপতি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মনজুর আলম মনজু সহ অনেকেই এসেছেন কলকাতায় খেলা দেখতে। অনেকেই আবার এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। অনেকেই এসেছেন বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে। বলা যায় কলকাতাকে এক খন্ড বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলেছে এপার বাংলার ক্রিকেট ভক্তরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ : মাহমুদউল্লাহ
পরবর্তী নিবন্ধটানা চার জয়ে সেমির দৌড়ে এখন অস্ট্রেলিয়া