ক্রিকেটের চরিত্রটাই যেন এমন। কখন যে কাকে হাসায় আর কাকে কাঁদায় কেউ বলতে পারে না। আর টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেতো অনিশ্চয়তা আর উম্মাদনার যেন শেষ নেই। যেমনটি ছিল গতকাল আইপিএলে গুজরাট টাইটান্স আর কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচটি ছিল তেমনই উত্তেজনা আর অনিশ্চয়তায় ভরা। এক সময় মনে হচ্ছিল সহজে ম্যাচটি জিতে যাবে গুজরাট। কিন্তু রশিদ খানের হ্যাটট্রিকে হঠাৎ করেই ছিটকে পড়ে ম্যাচ থেকে। ম্যাচের যখন শেষ ওভার তখন একেবারেই হিমালয়সম লক্ষ্য কলকাতার সামনে। কারন শেষ ছয় বলে যে কলকাতাকে নিতে হবে ২৯ রান। উইকেট নেই সাতটি। সে ম্যাচটি অবিশ্বাস্য ভাবে জিতে নিল কলকাতা রিংকু সিং নামক এক ঝড়ের বদৌলতে। শেষ ছয় বলে দরকার ২৯ রান। বল হাতে ইয়াশ দায়াল। প্রথম বল থেকে উমেশ যাদব নিলেন এক রান। পরের বলে রিংকু সিং মারলেন ছক্কা। তৃতীয় বলে এবার স্কয়ার লেগ দিয়ে আবার ছক্কা। চতুর্থ বলটি পাঠালেন লং অফ দিয়ে উড়িয়ে সীমানার বাইরে। শেষ দুই বলে দরকার ১০ রান। পঞ্চম বলটিরও একই পরিনতি। এবার লং অন দিয়ে বল গ্যালারীতে। শেষ বলে দরকার ৪ রান। কিন্তু রিংকু সিং যেন চার মারতে নারাজ। এবারো বলটিকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে। কলকাতা নাইট রাইডার্স পেল অবিশ্বাস্য এক জয়। ৩ উইকেটের দুর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল কলকাতা। এর আগে অবশ্য কম নাটক হয়নি ম্যাচে।
শেষ চার ওভারে কলকাতার যখন দরকার ৫০ রান তখন উইকেট হাতে ছয়টি। তখনই স্পিন ভেল্কি দেখালেন রশিদ খান। ১৭ তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ খান ফেরালেন আন্দ্রে রাসেলকে। দ্বিতীয় বলে ফেরালেন সুনিল নারাইনকে। তৃতীয় বলটিও ঠিকমত মোকাবেলা করতে পারলেননা শার্দুল ঠাকুর। তাকে এলবিডব্লিউর ফাদে ফেলে ফেরালেন রশিদ খান। তুলে নিলেন হ্যাটট্রিক। এবারের আইপিএলে এটি প্রথম হ্যাটট্রিক। আর টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে রশিদ খানের চতুর্থ হ্যাটট্রিক এটি। তবে সবকিছুকে বৃথা করে দিল শেষ ওভারে রিংকু সিং এর ঝড়। তাই রিংকু সিং এর ঝড়ের কাছে ম্লান হয়ে গেল রশিদ খানের হ্যাটট্রিক।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নামা গুজরাট টাইটান্স দারুন শুরু করেছিল ম্যাচে। দুই ওপেনার ৩৩ রান যোগ করলেও দ্বিতীয় উইকেটে শুভমান গিল এবং শাই সুদর্শন মিলে যোগ করেন ৬৭ রান। গিল ফিরেন ৩৯ আর সুদর্শন ফিরেন ৩৮ বলে ৫৩ রান করে। এরপর গুজরাটকে টেনে নিয়ে যান বিজয় শংকর। তার ২৪ বলে ৬৩ রানের ঝড়ের উপর ভর করে গুজরাট টাইটান্স সংগ্রহ করে ১০৪ রান। কলকাতার পক্ষে সুনিল নারাই নিয়েছেন ৩৩ রানে ৩ উইকেট। জবাব দিতে নামা কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৮ রানে হারায় দুই ওপেনারকে। এরপর তৃতীয় উইকেটে ভেংকটেশ আয়ার এবং নিথিশ রানা মিলে যোগ করেন ১০০ রান। তখন মনে হচ্ছিল সহজেই জয় তুলে নিচ্ছে কলকাতা। ২৯ বলে ৩৫ রান করে ফিরেন রানা। এরপর আয়ারের সাথে যোগ দেন রিংকু। কিন্তু তার সাথে ২৬ রান যোগ করার পর ফিরেন আয়ার। ফেরার আগে ৪০ বলে ৮টি চার এবং ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৮৩ রান করে আসেন আয়ার। এরপর শুরু রশিদ কানের ভেল্কি। তুলে নিলেন হ্যাটট্রিক। জয়টা যেন নিজেদের পকেটেই নিয়ে গেলে গুজরাটের এই স্পিনার। কিন্তু ওস্তাদের মার শেষ রাতের মত আসল কাজটা করে দেখালেন রিংকু সিং। তার টানা পাঁচ ছক্কায় অবিশ্বাস্য এবং ঐতিহাসিক এক জয় নিয়ে মাঠ চাড়ে কলকাতা নাইট নাইডার্স। ২১ বলে ৬টি ছক্কায় ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন রিংকু সিং। গুজরাটের রশিদ খান ৩৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এবারের আইপিএল এটি কলতাকার টানা দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয় মাচে বিরাট কোহলির ব্যাঙ্গালুরুকে হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিয়েছিল কলকাতা।