কর্মস্থলে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৪ উপায়

নিগার সুলতানা | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বব্যাপী নতুন গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা কর্মস্থলে নানাবিধ কারণে মানসিক অশান্তিতে ভুগে। অবসাদ এবং ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে খুব কম সংখ্যক নারীই ভিন্নপন্থা অবলম্বন করেন। তবে কর্মস্থলে সর্বাত্মক উন্নতি সাধনে, প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রত্যেক কর্মীর মানসিক শান্তির প্রয়োজন। কেননা কর্মীরাই এই লক্ষ্যগুলো পরিপূর্ণ করতে কাজ করে থাকেন।

বর্তমানে কর্মস্থলগুলো কুরুক্ষেত্র যেন। পেশাদার চাহিদা মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সংযুক্ত। নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো নাজুকভাবে দেখতে গবেষকেরা পরামর্শ দেন। কেননা এশিয়াসহ বেশিরভাগ দেশেই নারীরা কর্মস্থল এবং পারিবারিক টানাপোড়েনে আবদ্ধ থাকেন। চতুর্থ বিশ্বে এখন হয়তো এসব উক্তি পেশাদার শোনায় না, কিন্তু বাস্তবতায় প্রত্যেক নারীই সংসার করে কর্মস্থলেও পেশাদার আচরণ করতে হিমশিম খান। লিঙ্গ বৈষম্য, প্রাতিষ্ঠানিক কুচক্র মহল থেকে শুরু করে প্রত্যেক ধাপে ভারসাম্য রক্ষা করতে নারীদের অতিরিক্ত বেগ পেতে হয়।

ফলত কর্মস্থল এবং সামাজিক চাপ নারীর মানসিক এবং শারীরিক চাপ বৃদ্ধির জন্যে দায়ী। তবে এটা সত্য যে, সবকিছু ছাপিয়ে নারীরা ভালো স্থানে কাজ করছেন এবং প্রতিকূলতা শর্তেও নিজের কর্মক্ষমতায় সাফল্য অর্জন করছেন। কিন্তু কষ্টে অর্জিত এই সাফল্যও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভাবে ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।

নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করা কখনো জটিল হতে পারে তবে চারটি উপায় গ্রহণ করলে কর্মস্থলে সুন্দর ভারসাম্য আনা সম্ভব বলে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম তাদের এক গবেষণায় দাবি করেন। শুধু তাই নয়, নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাবও ফেলবে বলে গবেষকেরা আশাবাদী।

কেয়ারটেকিং এর মত কাজকেও সমান প্রাধান্য দেওয়া

যদিও বর্তমান বিশ্বে নারী পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার যথেষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পাই, কিন্তু বৈষম্যমূলক এক পর্দার আড়ালে সবাই যেন ঢাকা। আমাদের সমাজে এখনো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে নারীরা তাদের যোগ্যতার তুলনায় কম বেতনে চাকরি করেন। এছাড়া কেয়ারটেকিংএর মত কাজগুলোকে কেউ গণনায় ধরে না। ফলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে যতটা যত্ন দিয়ে নারীরা কাজ করেন, তার বিনিময়ে দীর্ঘসময় অবহেলা পেয়ে থাকেন। গবেষণা বলছে, কেয়ারটেকিং এর মত কাজগুলোকেও প্রাধান্য দিন। সকল শ্রেণির নারীদেরই কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাদের পারদর্শিতাকে কাজে লাগালে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব।

বিশ্বাসযোগ্য আচরণ বৃদ্ধি করুন

নারীরা বেশিরভাগ সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কটু কথার শিকার হন, ভিন্ন মত শুনেন। অনেকে হয়তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুল মন্তব্য করে বসেন। বৈচিত্র্যময় গোত্রের নারীদের তুলনামূলক বেশি শিকার হতে হয়। যেমন সমাজের তথাকথিত নিম্নশ্রেণির কর্মে নিযুক্ত নারীদের, যৌনকর্মী, হিজড়া সমপ্রদায় থেকে শুরু করে এমন অনেকের।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা এধরনের মন্তব্যের শিকার বেশি হয় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা হুমকির পথে। বেশিরভাগই কর্মস্থল নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন, হয়তো দিনে তিনবার ভাবেন চাকরি ছাড়ার ব্যাপারে। ফলে কর্মস্থলে বিশ্বাসযোগ্য আচরণ করা খুবই জরুরি, কোনো অবস্থাতেই যেন সহকর্মী অবিশ্বাস না করেন তা নিশ্চিতের দায়িত্বও নিজেদের। যে প্রতিষ্ঠান যতবেশি সুস্থ বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যও বাড়ার আশা ততবেশি।

কর্মস্থলে আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা

বেশিরভাগ শহরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব কর্মী প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে তারা সার্বক্ষণিক এক অশান্তিকর পরিবেশ নিজেদের মধ্যে বিরাজ করে। আবার বৃহত্তর শাখায় দেখা যায়, কর্মীরা অনেকেই মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন কিন্তু কর্মস্থলে তা প্রকাশ করতে পারছেন না। গবেষকেরা বলছেন, যে অঞ্চলেই কাজ হোক না কেন, কর্মস্থল যত বেশি আরামদায়ক হবে, তার কর্মীদের পেশাগত উন্নতি তত বেশি হবে। অর্থাৎ কর্মীদের আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। বরং নারী এবং পুরুষ উভয় কর্মীই এই আরামদায়ক পরিবেশের বাসনা করেন।

কর্মস্থলে প্রাতিষ্ঠানিক উপযোগিতা বৃদ্ধি

বিভিন্ন গবেষণা বলছে, নারীদের মস্তিষ্ক খুবই সৃষ্টিশীল এবং আইডিয়া জেনারেটে পারদর্শী। ফলে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা খুবই জরুরি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচিত নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপযোগিতা বৃদ্ধি করা। নিয়োগ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের যেকোনো স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পাশাপাশি, নারীরা যেন তাদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিয়ে মন খুলে কথা বলতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন যেসকল নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন ছুটির প্রয়োজন হয় তাদের অবশ্যই ছুটি দেওয়া, মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, উন্নত বিশ্বে নারীর মেনোপসের সময়তে ছুটি নিশ্চিতের ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা কেবল সহানুভূতির বিষয় নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎপাদনশীল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এই কৌশল অবলম্বন জরুরি। সহায়তামূলক কার্যক্রম, উন্মুক্ত কথপোকথনের ব্যবস্থা এবং পক্ষপাতমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক এই কার্যক্রম নারীর ক্ষমতায়নেও ভূমিকা পালন করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকম দামে ভেজালমুক্ত শাক-সবজি, পাহাড়ের বাজারে স্বস্তি
পরবর্তী নিবন্ধনোবেল জয়ী হান কাং