কর্পোরেশনের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করবেন না : সুজন

নির্বাচনের উত্তাপ যেন আত্মঘাতী রূপ না নেয় বিএনপির সচেতন অংশ রেজাউলকেই ভোট দেবে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সিটি কর্পোরেশনের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে না করার জন্য পরবর্তী মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, যেই নির্বাচিত হন, একটাই অনুরোধ, দল থেকে নির্বাচিত হলেও সব নগরবাসীর দায়িত্ব যেন নেন। আর পাবলিক প্রপার্টিকে যেন নিজের সম্পত্তি মনে না করেন। সকল মতের মানুষকে নিয়ে এই শহরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান হলে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে আসন্ন চসিক নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রশাসক পদে থাকায় নির্বাচনী আচরণ বিধির বাধ্যবাধকতার কারণে চসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছি না। তবে অন্তর থেকে উপলব্দি করি মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী বিজয়ী হলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আসলে একটা উত্তাপ থাকে। উত্তাপ হল নির্বাচনের প্রাণ। তবে এই উত্তাপটা যেন আত্মঘাতী না হয়। উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত না করে। সকলের কাছে করজোড়ে এই আহ্বান জানাব। এখন মিছিল মিটিং ছাড়াও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারেন। কারও মুখ কারও দেখারও দরকার নেই। নির্বাচনের পর চট্টগ্রামবাসী যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। টুকটাক যা হওয়ার হয়ে গেছে, আর যেন না হয়। সবাই প্রশাসনকে সহায়তা করুন। বিবেকের তাড়নায় এই বার্তা দিতে এসেছি। যদি দোষ হয়, ক্ষমা চাই। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠুভাবে যেন ভোট হয়। দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব- কোথাও যেন আর সংঘাত সংঘর্ষে না জড়ান। ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করুন, শক্তি দিয়ে নয়। ভালোবাসার জয় চিরস্থায়ী হয়।
এসময় তিনি প্রশাসক পদে থাকায় এবার নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এবার প্রথম আমার জীবনে কঠিন সময়। কারণ দায়িত্বে থাকায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। আমি একটা খাঁচার পাখির মত, যেন বন্দিশালা। দেখছি সবাই মিছিল করছে মিটিং করছে। ভিতরের যে ছটফটানিটা কাউকে বলতে পারছি না। করোনা আক্রান্ত এবং দলের নির্বাচনে ইচ্ছা থাকলেও সে প্রক্রিয়াতে সরাসরি কাজ করতে পারছি না। একজন রাজনৈতিক কর্মীর এই কষ্ট কেউ বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে সেই ১৯৭০ থেকে সব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ছিলাম। পরে স্থানীয় হোক, জাতীয় হোক মনোনয়ন চেয়েছি। না পেলেও ঘরে বসে থাকিনি। দলের সিদ্ধান্তই মুখ্য। যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তাদের দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আরো বলেন, ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরবাসীর মহোৎসবের দিন। এই দিন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার প্রতীক দিয়েছেন চট্টগ্রামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁকে অবশ্যই জয়যুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জিতলে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এতে তারা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবে। তবে বিএনপির সচেতন অংশ ও চট্টল দরদীরা চট্টগ্রামের স্বার্থেই শেখ হাসিনার প্রার্থীকে ভোট দেবেন। কেননা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছেন। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, বিএনপিরও যারা সচেতন আছে- চট্টগ্রামের স্বার্থে, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজের বাসভবনে আইসোলেশনে ছিলাম। সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় বৃহস্পতিবার নেগেটিভ রির্পোট পেয়ে করোনা মুক্ত হয়েছি। যারা আমাকে দোয়া করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি সুস্থ হয়ে সাংবাদিকদের কাছে ছুটে এসেছি বিবেকের তাড়নায়, কিছু না বলা কথা আকাংখা সাংবাদিকদের কাছে খুলে বলার তাগিদ থেকে।
তিনি বলেন, ৩১ মার্চ চসিক নির্বাচন করোনা প্রাদুর্ভাবে স্থগিত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আমাকে প্রশাসক পদে নিযুক্তি দিয়ে ধন্য করেছেন। আমি আমার যোগ্যতা, সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা দিয়ে নগরবাসীর ভালবাসা ও আস্থায় নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে চেষ্টা করেছি। আমার মেয়াদকালীন সময় ৬ মাসের মধ্যে দেড় মাস সাপ্তাহিক ও সরকারি সাধারণ ছুটি থাকলেও আমি প্রায় প্রতিদিন মানুষের কাছে গেছি, সমস্যার কথা শুনেছি এবং সমাধানের চেষ্টা করেছি।
যতটুকু পেরেছি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্বটাকে পালনের চেষ্টা করেছি। সাধ্যে যা কুলায়, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, মেধা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। যে স্বপ্নের চট্টগ্রাম হৃদয়ে লালন করেছি তা গড়ে তোলার জন্য। চট্টগ্রামবাসী ও মিডিয়ার ভাইয়েরা অফুরন্ত সমর্থন আমাকে দিয়েছেন। মানুষ একমাস পরেই বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু কেউ তা করেনি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। যারা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন তা সমাধানের চেষ্টা করেছি। সব সাফল্য চট্টগ্রামবাসীর।
তিনি বলেন, প্রয়াত জননেতা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হবার সময় চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও স্বপ্ন পূরণে ২৮ দফা অঙ্গীকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলো একে একে পূরণ করে চলেছেন। এগুলোর মধ্যে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর, বে-টার্মিনাল নির্মাণ, ফেনী থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বাইপাস নির্মাণ, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মান, চট্টগ্রাম-ঢাকা ডবল রেল লাইন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সমপ্রসারন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব হিমালয়সম উচ্চতায় সমুন্নত হবে। চট্টগ্রাম অবশ্যই বাণিজ্য ও পর্যটন বান্ধব নগরীতে পরিণত হবে। আমারা এখন সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি। আমি আজ বিবেকের তাড়নায় সেই কাক্সিখত শুভ দিনের বার্তা দিয়ে গেলাম।
প্রশাসক বলেন, এম.এ. আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের জন্য যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তব হবার পথে, এবার যিনি মেয়র হবেন তিনি দলের প্রার্থী হলেও নগর পিতা হিসেবে সকলের। সবার সম্মিলিত সহযোগে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসক বলেন, আমার মেয়াদকাল ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শেষ দিনটি পর্যন্ত আমি অর্পিত দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, আগামী পূর্ণিমা রাতে লালদিঘী মাঠে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক জ্যোৎস্না উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এতে গান, কবিতাসহ নানান আয়োজনে আনন্দ-উৎসবের উপাদান যুক্ত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারা কর্মকর্তার কক্ষে হলমার্ক জিএমের সঙ্গে নারীর সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধমেলার ভিড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ