কর্ণফুলীর ৩ নৌ-ঘাটে যাত্রী পারাপার কমে অর্ধেক

হতাশ মাঝি ও ইজারাদাররা, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের প্রভাব

শফিউল আজম,পটিয়া | শুক্রবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর কর্ণফুলীর তিন নৌঘাটে যাত্রী পারাপার কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে মাঝিমাল্লা ও ইজারাদাররা। গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করার পর তিনটি নৌঘাটে যাত্রী পারাপার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে যাত্রী ও ঘাট সংশ্লিষ্ট মাঝিমাল্লা, ব্যবসায়ী ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। পাশাপাশি নৌ ঘাট ইজারাদারও পড়েছে বেকায়দায়।

সরেজমিন কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ১১নং মাতব্বর ঘাট, ১৪ ও ১৫ নং ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এসব নৌ ঘাটে আগের মতো যাত্রী উঠানামা করছে না। ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও তুলনামূলক যাত্রী কম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে। ঘাটে যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করা সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীর অভাবে সারি সারি দাঁড়িয়ে যেন অলস সময় পার করছে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা গুলো বেঁধে রাখা হয়েছে ঘাটে। আগের মতো তেমন হাঁকডাক ও যাত্রীদের হৈহুল্লোড় নেই। নৌকা পারাপারে যাত্রী কম আসায় ঘাটে তেমন চাপ নেই। ঘাটে এক ঘণ্টার বেশি অপেক্ষার পর ১২/১৪ জন যাত্রী নিয়ে মাতব্বর থেকে নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম হৃদয় জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পূর্বে এ তিন ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ২৮৩০ হাজার যাত্রী উঠানামা করতো। বর্তমানে এ যাত্রী কমে এসেছে অর্ধেকে। এতে ঘাট এলাকায় ব্যবসায়ী, সিএনজি অটোরিকশা ও মাঝি মাল্লাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মাঝে এর প্রভাব পড়েছে। অনেক শ্রমজীবী মানুষ যাত্রী কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার আগে ১৫২০ মিনিট পরপর ২০ জনের বেশি যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিন চালিত বোট ছেড়ে যেত। এখন যাত্রীর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকের নিচে। এদিকে প্রতিদিন ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে ঘাটের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। জুলধা মাতব্বর ঘাটটি ভেঙে অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। জুলধা থেকে মাতব্বর ঘাটে আসা যাত্রী মো. করিম উদ্দিন বলেন, ঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। ঘাট থেকে নদী পার হয়ে তারপর শহরে যাব। নৌকায় ৩০ মিনিট ধরে বসে আছি, এখনও যাত্রী স্বল্পতায় বোট ছাড়ছে না। ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমাদের ৪টি নৌকা আছে। আগে ৪টি নৌকা দিয়েও যাত্রীর ভীড়ে হিমশিম খেতে হতো। টানেল চালুর পর ঘাটে এতো যাত্রী কমে যাবে ভাবতেও পারিনি। ঘাটে এ রকম হাহাকার আগে কখনও দেখতে হয়নি। আমরা বর্তমানে অধিকাংশ সময়ে ৭১০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে মাতব্বর ঘাট ছেড়ে যাচ্ছি। যাত্রী কম হওয়াতে খরচ বেড়ে গেছে। মালিকপক্ষ লোকসানের মুখে রয়েছে।

জুলধা মাতব্বর ঘাট এলাকার সিএনজি চালক মো. দিদার বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর থেকে দিনে দু’ একটা ভাড়া হয়। এর আগে প্রতিনিয়ত ভাড়া হতো। এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও ভাড়া পেতে কষ্ট হয়। জুলধা ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. সুলতান বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল হওয়ার আগে পটিয়া, বোয়ালখালীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই ঘাট দিয়ে পারাপার হতো। প্রতিনিয়ত মানুষের জ্যাম থাকত, আর এখন টানেল দিয়ে মানুষ আসা যাওয়া করে। এইভাবে দিনের পর দিন লোকসান হলে কিভাবে চলব। ঠিকমতো মাঝিদেরও বেতন দিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ঘাটটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন হলেও তারা ঘাটের সংস্কারে কোনো কাজ করছে না। ঘাট মেরামতে প্রতি সপ্তাহে আমাদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এইভাবে আর কতদিন? ঘাট মেরামত না করলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। সিটি কর্পোরেশন শুধু ইজারা দেওয়ার সময় খবর রাখে। ঘাট মেরামত করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কয়েকটি চিঠি দিলেও তারা কিছুই করেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু
পরবর্তী নিবন্ধইলিশ ধরে ফিরছে জেলেরা