কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজা ও চাতরী চৌমুহনী বাজার এই দুই স্পটে যানজটের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এই দুই স্পটে আটকা পড়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষ যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। এ ব্যাপারে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ক্ষোভ প্রকাশ করলেও যেন কারো মাথাব্যথা নেই। কয়েক মাস ধরে অসহনীয় যানজটের মূল কারণ হিসেবে টোল প্লাজা ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন চালক ও যাত্রীরা।
অন্যদিকে আনোয়ারার টানেল ৬ লেন সংযোগ সড়কের চাতরী চৌমুহনী বাজারেও প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা দীর্ঘ যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চাতরী চৌমুহনী বাজারে সড়ক দখল করে ভাসমান দোকান বসানো ছাড়াও সড়কে ইচ্ছেমতো বাস, সিএনজি টেক্সি ও রিকশা পার্কিং যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যানজট নিরসনে প্রশাসনিক উদ্যোগ না থাকায় মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।দক্ষিণ চট্টগ্রাম যাত্রী সেবা নিশ্চিত ও সড়কে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল দেখভাল করার জন্য মইজ্যারটেক ও চাতরী চৌমুহনী বাজারে আলাদা ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে কার্যক্রম। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আনোয়ারা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ চাতরী চৌমুহনী বাজারে যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ নেই। দীর্ঘদিন চাতরী চৌমুহনী বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। সরকার পরিবর্তন হলে সিন্ডিকেট পরিবর্তন হয়, কিন্তু বাজারের অবস্থা পাল্টায় না।
অভিযোগ আছে, বর্তমানে চাতরী বাজারে সিএনজি টেক্সি, ব্যাটারি রিকশা ও ভাসমান দোকান থেকে টাকা আদায় করছে একাধিক সিন্ডিকেট। বাজারের গোলচত্বরে যাত্রী ওঠানোর নাম করে ইচ্ছামতো দাঁড়িয়ে থাকে বাস। ফলে যানজট কমছে না। চাতরীর যানজটের কারণে কোরিয়ান ইপিজেডের শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে মইজ্যারটেক টোল প্লাজায় যানজটের কারণে পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, লোহাগাড়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজারসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার যাত্রীরা প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
আনোয়ারার ব্যবসায়ী হোসেন মো. ইকবাল জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?
টানেল সংযোগ সড়কের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবি দিঘির মোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার মূল কারণ যানজট নিরসন। তবে সড়ক প্রশস্ত হলেও যানজট নিরসন হয়নি। যানজট ছাড়া কর্ণফুলী সেতু থেকে চাতরী চৌমুহনী বাজার আসতে একটি গাড়ির ১৫–২০ মিনিট সময় লাগে। বর্তমানে যানজটের কারণে চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে।
মইজ্যারটেক টোল প্লাজায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যানজটের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চেয়ে টোল আদায়ে অব্যস্থাপনা বেশি দায়ী। এসব তো আমরা ঠিক করতে পারব না। টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে যানজট কমানো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
মামুন নামে এক গাড়ি চালক যানজটের জন্য ট্রাফিক এবং টোল প্লাজার টোল আদায়কারীদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, কোনো পক্ষ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না; যার কারণে এই যানজট। যানজটে আটকা পড়ে রোগী ও লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স। মানুষ অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে। কারো কিছু করার থাকে না।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, চাতরী চৌমুহনী বাজারের যানজট নিরসনে ট্রাফিকের পাশাপাশি পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে।