চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সরকারি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভবনটি হস্তান্তর করার মাত্র ১০ মাস যেতেই এখন এর ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। কালো দাগে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে দেয়াল ও ভেতরের সিঁড়ি ঘর। মাটি ধসে ভেঙে গেছে বাউণ্ডারি ওয়ালের ভেতরের চারপাশ।
স্বয়ং চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (তহসিলদার) এ কে এম সাজ্জাদ শাহ আমজাদ অভিযোগ করেন—ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাস্তবায়ন সংস্থা ছিলেন কর্ণফুলী এলজিইডি। উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল ভবনের কিছু কাজ তাঁর মাধ্যমে শেষ করেছেন। আমরা সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ভবনে প্রবেশ করেছি।’
এছাড়াও ২০২১ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও প্রথম ঠিকাদার কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি। কাজ ফেলে পালিয়ে যান। পরে তিন ঠিকাদার মিলে শেষে মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজ নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান লেজে গোবরে কোন রকমে কাজটি শেষ করেন। তাঁদের সাথে কর্ণফুলী এলজিইডিও তড়িগড়ি করে কোন রকমে বুঝে দিয়ে দায় সারলেন।
সরেজমিন পরিদর্শন করলে দেখা যায়, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বাহিরে ও ভেতরের দেয়ালে ছোপ ছোপ কালো দাগ। উপরের ছাঁদ আর বাহিরের দেওয়াল চষে ভেতরে পানির দাগ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, এটি নির্মাণে ২০২১ সালে ব্যয় করা ধরা হয়েছিলো ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু তৎকালিন এসিল্যাণ্ড পিযুষ কুমার চৌধুরী জানালেন এর মোট ব্যয় ৭০ লাখ টাকা ছিলো। আর এলজিইডি প্রকৌশলী জানালেন ৬৮ লাখ টাকা। বরাদ্দ যাই হোক। সমস্যা হলো এক বছরেও যায়নি ভবনের মেয়াদকাল। ছাঁদ ও দেয়াল চুইয়ে পানি ভেতরে আসা মানে অনেক অনিয়মের প্রশ্ন উঁকি দেয়।
আরো দেখা গেছে, ওই কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে সলিং করা ছোট্ট সড়ক। চত্বরের বাকি অংশ ভরাট করা হয়নি। ঘাসে ঝোপঝাড়। দেয়ালের পাশে মাটি ভেঙে দেবে গেছে। মূল চত্বরের চারপাশের কোনায় অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের পাশের মাটি দেবে নিচু হয়ে গেছে। দ্বিতীয় তলায় উঠার সিঁড়ি ভেঙে উপরে যেতেই দেখা মিলে, ছাদ ও দেয়াল চুইয়ে পানি পড়ে পুরো কালো হয়ে গেছে।
জেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় যে সব ভূমি অফিস নির্মাণ করেছেন তার সব ভবন হস্তান্তর করেছেন।
কিন্তু ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ জানায়নি। এজন্য নিম্নমানের কাজ করে তা যেনতেন ভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে বলা হলেও সত্যতা নিশ্চিত করা কঠিন বলে তাঁরা মনে করেন।
ওদিকে, কর্ণফুলী উপজেলায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ভবন নির্মাণ কাজে জড়িত ইঞ্জিনিয়ার মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ভবন নির্মাণের পর নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহৃত হয়ে থাকলে তা বের করার প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি চট্টগ্রামে নেই। তবে ছাঁদ বা দেয়াল ভেদ করে যে পানি পড়ে তা বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে আড়াই ইঞ্চি পুরু জলছাদ কিংবা দেয়ালে পর্যাপ্ত প্লাস্টার করা দরকার ছিলো। হয়তো কসমেটিক লেপন দিয়ে কোন রকমে কাজ শেষ করেছে। তাই পানি ভেতরে আসতেছে।’
কর্ণফুলী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ভবনে যদি কোন ধরনের সমস্যা হয়। পানি ভেতরে আসে। তবে ভূমি অফিসের লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে পুনরায় ভবনটি পরিদর্শন করে সংস্কার করে দেওয়া হবে।’
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত এর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলীর ফোনেও একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
তবে একই অফিসের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী সুমন তালুকদার বলেন, ‘নিম্নমানের কাজ হয়েছে, এটা ঠিক নয়। এ বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর বলা যাবে। প্রয়োজনে সংস্কার করে দেবে এলজিইডি।’