চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ৭০ কেজি নিষিদ্ধ পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর জব্দ করেছে উপজেলা মৎস্য অফিস। পরে কর্ণফুলী উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কে খবর দেওয়া হয়।
১লা জুলাই (সোমবার) উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার থেকে এই মাছগুলো জব্দ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী।
কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য অফিসার স্বপন চন্দ্র দে জানান, চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট বাজারে অভিযান চালিয়ে ২০ কেজি নিষিদ্ধ পিরানহা ও ৫০ কেজি আফ্রিকান নিষিদ্ধ মাগুর জব্দ করা হয়।
এ সময় আরাফাত হোসেন নামে এক বিক্রেতাকে তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী। জব্দ মাছ গুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, কর্ণফুলীর বিভিন্ন বাজারে লালচান্দা বলে বিষাক্ত পিরানহা ও নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কম বলে নিম্নআয়ের মানুষের কাছে এসব মাছের চাহিদা একটু বেশি।
এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু মাছ বিক্রেতারা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন নিষিদ্ধ পিরানহা। আর ৩৫০/৪০০ টাকা ধরে আফ্রিকান মাগুর বিক্রি করতে দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা এসব বিক্রয় করে থাকেন।
এ পিরানহা মাছ একটি হিংস্র এবং রাক্ষুসে মাছ। ক্ষুধার্ত থাকার সময় এক পিরানহা আরেক পিরানহা মাছকেও খেয়ে থাকে। ধারালো দাঁত আর প্রায় মানুষের মতো জিহ্বা থাকার কারণে সে তার লক্ষ্যবস্তুতে শরীরের ১০ গুণ বেশি শক্তিতে কামড় দিতে সক্ষম।
মৎস্য গবেষকরা বলেছেন, ৩০টি পিরানহা মাছ একটি হরিণকে খেতে সময় নেয় মাত্র ১ ঘণ্টা। এ মাছের এমন কিছু বিষক্রিয়া আছে যা আমাদের পাকস্থলি বিনষ্ট করার প্রধান হাতিয়ার। এক বোতল অ্যালকোহলের চাইতেও এ মাছের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি অংশ বেশি ক্ষতিকর।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পিরানহা মাছ চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধি, বাজারে বিক্রি এবং বাজার থেকে ক্রয় সরকারীভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এবং ২০১৪ সালের জুন থেকে আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন, বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
অন্যদিকে, আফ্রিকান মাগুর মাছ দেখতে অনেকটা দেশি মাগুর মাছের মতো হলেও আকারে অনেক বড় হয়। সর্বভুক হওয়ায় খুব দ্রুত এই মাছ বেড়ে ওঠে। একটি পরিণত আফ্রিকান মাগুর মাছ ৪ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ওজন হতে পারে ১৫/১৬ কেজির মতো। এই দুটি মাছকেই রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ বলা হয়।
প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস রুলস, ১৯৮৫ এর কয়েকটি ধারা সংশোধন করে আফ্রিকান মাগুরের উপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এছাড়া বিদেশ থেকে আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছ, মাছের রেণু ও পোনা আমদানি করলে জেল জরিমানার বিধান রেখে মৎস্য সংঘ নিরোধ আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
কর্ণফুলী উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘ব্রিজঘাট বাজারে নিষিদ্ধ পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ বিক্রি করার অপরাধে একজনকে তিন হাজার টাকা জরিমানা ও ৭০ কেজি মাছ জব্দ করা হয়।’