কর্ণফুলীতে যুবককে ছুরি মেরে প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামি !

জে. জাহেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ১:৫৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে রাতের আঁধারে প্রকাশ্যে ছুরি মেরে মো. জাহেদ (৩০) নামে এক যুবককে রক্তাক্ত করে জখম করলেও থানা পুলিশ গত ১১দিন যাবত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা কিংবা মামলা না নেওয়ার অভিযোগ এসেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৬ শে সেপ্টেম্বর রাত ৮টার সময় উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর (৪ নম্বর ওয়ার্ড) মৌলানা আবুল ফয়েজের বাড়ির সামনের রাস্তায়।

ঘটনার পরেই চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগী জাহেদ সিএমপির কর্ণফুলী থানায় চিহ্নিত অপরাধীদের নামে একটি অভিযোগ দেন। থানা পুলিশ প্রথমেই অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান কর্ণফুলী থানার এসআই মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান। তিনি ঘটনার সত্যতা ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করর অপরাধীদের সনাক্ত করেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

কিন্তু এ ঘটনার পরে ভুক্তভোগী অসুস্থ শরীরে টানা ৮ দিন থানায় আসা-যাওয়া করে, ওসির সাথে দেখা করলেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন। এভাবে অপরাধ করে কোন অপরাধীরা যখন কোন এলাকায় ভিকটিমের সামনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের প্রতি আস্থা হারাতে পারে মানুষ।

যেমনটি ঘটছে খোয়াজনগর গ্রামের মো. ইলিয়াছের ছেলে মো. জাহেদের বেলায়। ভিকটিম খোয়াজনগরের ইনটাইমেটস ইলাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জুনিয়র অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন। এদিকে, এ ঘটনাকে আইনের ব্যত্যয় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা এম মঈন উদ্দিন।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের বড় বোন জামাই নুরুল ইসলাম (৪০) জাহেদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পরদিন বিকেলে সাড়ে ৫ টার দিকে বড় বোনজামাই কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর হযরত মোজাদ্দেদ আজম (রাঃ) জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে সাব্বির ও শওকত নামে দুই যুবক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

বোনজামাই এটার প্রতিবাদ করলে সাব্বির ও শওকত দুজনেই তাঁকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। পরবর্তীতে ভিকটিম কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর (৪ নং ওয়ার্ড) মৌলভী আবুল ফয়েজ এর বাড়ির সামনে গেলে শওকত ও সাব্বিরকে দেখতে পেয়ে বোনের জামাইকে মারার কারণ জিজ্ঞেস করেন।

এতেই দুই অপরাধী ক্ষিপ্ত হয়ে জাহেদকে এলোপাতাড়ি মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। একপর্যায়ে সাব্বির কোমরের পিছন হতে ১টি ধারালো ছুরি বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে পেটে মারেন। এতে হঠাৎ সরে গেলে ভিকটিমের বাম পায়ের উরুতে (রানে) লেগে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘মামলা নেবার মালিক তো ওসি। তবে আমি যতটুকু অভিযোগটি তদন্ত করেছি ঘটনাটি সত্য। আমি সিসিটিভি ফুটেজসহ সংগ্রহ করে ওসি স্যারকে জানিয়েছি। এটি মামলা নেবার মতো ঘটনা। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা আসলেই অপরাধী। মাঝেমধ্যে এরা গার্মেন্টস কর্মীদের মোবাইলও ছিনতাই করেন বলে স্থানীয়রা জানান।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব ও চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ রুলস অব বেঙ্গল (পিআরবি) এবং উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ধর্তব্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। কোনো অপরাধের বিচার নিশ্চিতের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়, আর পুলিশ রুলস অব বেঙ্গল (পিআরবি)-কে পুলিশের বাইবেল হিসেবে গণ্য করা হয়।’

বিষয়টি উপস্থাপন করে প্রশ্ন করলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘একটি অভিযোগ আমরা নিয়েছিলাম। এরপরে এজাহারও একটি জমা আছে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখতেছি। হুট করে মামলাটি নিলে আসামিরা পালিয়ে যেতে পারে। যদি তাদের ধরে মামলাটি করি। তাহলে ভুক্তভোগী প্রতিকারটা ভালো পাবে।’ অথচ থানার এসআই নূরে আলমও ভুক্তভোগীকে একই আশ্বাস দেবার আগেই ২৪০ ঘন্টা পার হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে সিএমপি বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘ধর্তব্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ না নেওয়ার ক্ষমতা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নেবো। তারপর যৌক্তিক হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলে দেবো।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীর যুবক পতেঙ্গা থানা ভাঙচুর মামলায় জেলে
পরবর্তী নিবন্ধছাত্র আন্দোলনে শহীদদের সম্মান জানিয়ে ৯০ দিন পর ক্লাসে শিক্ষার্থীরা