চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটায় বাদামতল খাল মুখে অবৈধভাবে গড়া স্থাপনা ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে টানা ৫ ঘন্টার অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এতে অভিযোগ ছিলো দুটি প্রভাবশালী কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে খালের মুখে দ্বিতল ভবন ও দেয়াল নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ রাখার। যা গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বাদামতল এলাকার নদীপাড়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী এ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সিএমপি কর্ণফুলীর পুলিশ ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ।
সরেজমিনে জানা যায়, চরপাথরঘাটার বাদামতল খালের মুখে দুটি প্রভাবশালী কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে খালের জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছিলেন।
ফলে, খালের মুখে এই দুই কোম্পানি স্থাপনা তৈরি খাল মুখ বন্ধ করে রাখায় পানি চলাচল সম্পূর্ণ ব্যাহত ছিলো। এমনকি জোয়ারের সময়ও কর্ণফুলী নদীর পানি বাদামতল শাখা খালর প্রবেশ করতো না। কোম্পানি দুটি প্রভাবশালী হওয়ায় সহজে এলাকার কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুলতো না। কিন্তু গত কয়েকদিনে আবারও খালের মুখে দেয়াল নির্মাণ করছেন এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রমাণ করে এসিল্যাণ্ডের কাছে অভিযোগ করেন।
এর আগে অনেকেই অভিযোগ তোলেছিলেন, কর্ণফুলীর বাদামতল মৃত খালকে জীবিত করতে কেউ এগিয়ে আসছে না! কিন্তু অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক বাদামতল খালের মুখ উদ্ধারে নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন।
এমনকি বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আরএস, বিএস খতিয়ান ও সিট মুলে এটি রেকর্ডিয় সরকারি খাল। ভূমির শ্রেণিও দেখানো হয়েছে খাল।
কিন্তু মূল খালটি এখনো দখল আর ভরাটের ফলে প্রায় নিশ্চিহ্ন। দেখা যায়, বাদামতল খাল তার জৌলুস হারিয়েছে। দখল আর ভরাটে খালের পুরো শরীর জরাজীর্ণ।
কিভাবে এটি হলো জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, প্রথমে খালের বিভিন্ন অংশে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। পরে সেখানে নির্মাণ করা হয় বিভিন্ন স্থাপনা, বাড়িঘর টয়লেট।
এলাকাবাসীর মতে, প্রভাবশালীরাই এসব কাজে জড়িত। তারা অতীতে প্রশাসনের কোন বাঁধা না পেয়ে এসব কাজ করছেন। শুধু দখল আর ভরাটই নয়, পুরো বাদামতল মুল খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে এক রকম অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
চরপাথরঘাটার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ‘যত দখল আর ভরাট বাদামতল খালে। অথচ চরপাথরঘাটার একমাত্র পানি চলাচলের উৎস এটি। এলাকাবাসীর স্বার্থে এটি রক্ষা করা দরকার। দখল, ভরাট ও দূষণ থেকে সকলকে মুক্ত হওয়া জরুরি।’
খাল পাড়ের কিছু লোকজন জানান, দীর্ঘদিন দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবৈধ দখলে খালটি সংকীর্ণ হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরপাথরঘাটা এলাকায় বেড়েছে জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে বাদামতল খালটি শেষ হয়েছে সৈন্যেরটেক পুলের উপর। জোয়ারে নয়াহাট সেতুর মুখ ও বাদামতল খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতো। এখন আর এ খাল দিয়ে পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। দখল-দূষণে পুরো খাল ভরাট হয়ে গেছে।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চরপাথরঘাটার ১ নম্বর সিটে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত এই খালে ২৮৫ দাগে জমি রয়েছে প্রায় ৮৭ শতক। কিন্তু খালটির পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে দখলদারিত্বের কারণে। আগে খালটির প্রশস্ততা ছিল ৪০ থেকে ৫০ ফুট। কোনো কোনো জায়গায় ৩০ ফুট। এখন তা দিনে দিনে দখলে সংকুচিত হয়েছে।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ‘উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খালটির বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। খালটির বর্তমান পরিস্থিতি ও দখলদার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বাদামতল খাল, খোয়াজনগর খালসহ উপজেলার বিভিন্ন খাল খননে প্রস্তাব পাঠিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।’
অভিযান প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা দেখতে সরেজমিনে গিয়ে খালের মুখ দখলের প্রমাণ পেয়েছি। খাল মুখে বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা তৈরি করে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে আমরা তা অবমুক্ত করে দিয়েছি। নিজেরাও কিছু সরিয়ে নিয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘পরবর্তী বাদামতল খালকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কেননা, জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল খনন করতে চরপাথরঘাটার সব খালের অবস্থা পরিদর্শন করা হচ্ছে।’