কর্ণফুলীতে অপহৃত যুবককে ৫ ঘন্টায় অক্ষত উদ্ধার

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৬ মার্চ, ২০২৫ at ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা থেকে অপহৃত যুবক শহিদুল আলম জুয়েল (৩২)-কে মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ।

পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, দিনগত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১১টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের বাজার থেকে কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নিজেদের নগরীর ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে দিয়ে জুয়েলকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায়।

পরিবার ও স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তাকে চান্দগাঁও থানা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তবে, তদন্তের পর জানা যায়, চান্দগাঁও থানায় আটক থাকা ব্যক্তির সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

পরিবারের অভিযোগ পেয়ে কর্ণফুলী থানা পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে। রাত ১টা ৬ মিনিটে জুয়েলের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখা যায়, তার অবস্থান নগরীর খুলশী এলাকায়। পরবর্তীতে ধারণা করা হয়, তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘোরানো হচ্ছে।

অপহরণকারীদের গতিবিধি শনাক্ত করতে কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ দ্রুত ব্যবস্থা নেন। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয় চেকপোস্ট। প্রতিটি গাড়ি তল্লাশি করা হয়, বিশেষ করে কালো নোহা, হাইস ও মাইক্রোবাসগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি রাখা হয়।

এরই মধ্যে অপহরণকারীরা মুক্তিপণের জন্য জুয়েলের পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে দরকষাকষির পর তারা ৫ লাখ টাকায় নেমে আসে এবং টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

কর্ণফুলী থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল অপহরণকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে থাকে। রাত ২টা ২১ মিনিটের দিকে আবারও জুয়েলের ফোন ট্র্যাক করে দেখা যায়, সে নগরীর কোতোয়ালী এলাকায় রয়েছে।

অবশেষে পুলিশের ব্যাপক অভিযানের চাপে অপহরণকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। রাত ২টা ৫১ মিনিটে খবর আসে যে, তারা জুয়েলকে ছেড়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালী থানার সামনে দেখা যায়, জুয়েল নিজেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে থানায় প্রবেশ করছে।

ভিকটিম জুয়েল পরে জানান, অপহরণকারীরা নিজেদের “ছাত্র সমন্বয়ক” পরিচয় দিয়ে তাকে ডেকে নেয়। পরে একটি প্রাইভেট কারে তুলে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরানো হয়। তবে, পুলিশের টানা অভিযানের কারণে তারা পরিকল্পনা পাল্টাতে বাধ্য হয় এবং অবশেষে তাকে মুক্তি দেয়।

কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালিয়েছি। পুলিশের টানা অভিযানের চাপে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভিকটিমের পিতা মো. শাহ আলম পুলিশের এই সাহসী ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যে আমার ছেলেকে অক্ষত উদ্ধার করার জন্য কর্ণফুলী থানার ওসি ও তার টিমের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

কর্ণফুলী থানা পুলিশের দ্রুত ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপের ফলে অপহরণের মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যেই যুবক জুয়েলকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনাটি পুলিশের কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবশেষে দেখা মিলছে বোতলজাত সয়াবিনের, ‘উধাও’ খোলা তেল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা