বিশ্ব নদী দিবসের সেমিনারে প্রাণীবিজ্ঞানী ড. মো. আনিসুজ্জামান খান বলেছেন, কর্ণফুলী, হালদা ও বুড়িগঙ্গা রক্ষায় রাষ্ট্রীয়, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবাইকে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে। কর্ণফুলী, হালদা ও বুড়িগঙ্গায় দূষণ বা নেগেটিভ কাজ না করতে আমরা এ তিনটি পর্যায়ে কাজ করতে পারি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থাৎ তীরে যারা আছেন, তারা যদি দূষণ না করেন, দখল থেকে বিরত থাকেন, বালু উত্তোলন থেকে বিরত থাকেন, তাহলে আমরা নদী রক্ষা করতে পারবো।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে গ্রিন প্লানেটের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নদীর দখল দূষণ বন্ধে তীরবর্তী মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা যদি দূষণে লিপ্ত থাকে তাহলে ভাটি অঞ্চলের মানুষের ক্ষতিটা বেশি হবে। একইভাবে ভাটির মানুষদেরও নদী দূষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি আমরা এ ৩টি পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই, তাহলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারবো। যদি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পায় তাহলে দেশের প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। সাংবাদিক মাইনুদ্দিন দুলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, চবি প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো–অর্ডিনেটর ড.মো.মনজুরুল কিবরিয়া। বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, রাউজান পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত, গ্রিন প্লানেটের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের অনেক নদ–নদী দখল হয়ে গেছে, পরিবেশের বিপর্যয় হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব নদীপ্রবাহ আছে– সেখানে মৎস্য সম্পদ, জীব– বৈচিত্র্য এবং নদীর তীরের মানুষের যে বৈচিত্র্য, নৃ–তাত্ত্বিক যে বৈচিত্র্য, এটি শুধু দেশের জন্য নয়, এশিয়া মহাদেশের জন্যও অনেক গর্বের বিষয়।
ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদী মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদী জীবনের বাহক, সামাজিকতার পরিবাহক, সংস্কৃতির স্রোতধারা। সভ্যতার শুদ্ধি–শুচিকারক, পরিবৃদ্ধি, পরিচালন, পরিবহন, পরিসমাপ্তিতে নদী অন্যতম অনুষঙ্গ, অনুঘটক। নদীর গুরুত্বকে তুলে ধরার জন্য, আমাদের সমাজে নদীর নাব্যতা ও গতিময়তাকে অবারিত রাখার জন্য, নদীর প্রয়োজনীয়তাকে বিশ্বময় জাগিয়ে রাখার জন্য, নদী ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য, নদীর সংকটকে পর্যালোচনার জন্য এবং নদীর সংকটাপন্ন অবস্থাকে সর্বসাধারণ এবং নীতি নির্ধারকদের নজরে আনার জন্য বিশ্ব নদী দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, দূষণমুক্ত নদী ও সুস্থ জীবন একে অপরের পরিপূরক। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ নদী দেখতে অভ্যস্ত আমাদের বর্তমান প্রজন্ম। তারপরও বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেয়ার মতো কিছু দূষণমুক্ত নদী রয়েছে। পানির গুণগত মান ও অন্যান্য জীব বৈচিত্রের প্রাচুর্যতা এবং স্রোতযুক্ত নদীকে দূষণমুক্ত নদী বলা যায়। শক্সখ কিংবা সাংগু নদী তার উদাহরণ।
তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং শীতলক্ষ্যা নদী, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দিকে তাকালে বর্তমান বাংলাদেশের নদীগুলোর একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায়। ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব দূষণে দূষিত দেশের অধিকাংশ নদী। আমরা নদীকে মনে করি বর্জ্যের ডাম্পিং স্টেশন। কোভিড–১৯ আমাদের নদীর উপর শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে– কোভিড–১৯ এর মাধ্যমে নদীগুলোর নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে। আমরা যদি নদী রক্ষায় সতর্ক না হই, তাহলে আমাদের জন্য কোভিড–১৯ এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে যৌক্তিকভাবে হালদার নামটি উঠে আসে। কারণ হালদা একমাত্র নদী, যার উৎস ও শেষ বাংলাদেশে।