কর্ণফুলী রক্ষায় সকল আয়োজন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে

| সোমবার , ১২ মে, ২০২৫ at ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেছেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো রকমের কার্পণ্য করা হবে না। তিনি কোতোয়ালী থানা, সদরঘাট ও বাকলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা নাই এমন সব স্থাপনা যেন দ্রুত উচ্ছেদ করা হয়। আদালতের কোনো নির্দেশনা না থাকলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একদিনও দেরি করা হবে না। তিনি বলেন, এই নদী দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে শুধু তাই নয়। ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি রপ্তানি এই নদী দিয়ে হয়। তিনি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সাম্পান মাঝিদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নদী রক্ষায় আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। এতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়ে নদী দখল দূষণ থেকে বিরত থাকবে।

কর্ণফুলী ও দেশের নদনদী রক্ষায় ১৯তম ‘সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার তিন দিনের অনুষ্ঠান মালার দ্বিতীয় দিনে একথা বলেন। সিএমপি কমিশনার বলেন, সাম্পান শোভাযাত্রা একটি অভিনব আন্দোলন। এই ধরনের সামাজিক আন্দোলন সত্যি প্রেরণাদায়ক। উদ্বোধনী বক্তব্যে রাজনীতিবিদ মো. আলী আব্বাস বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে নামেবেনামে অবৈধভাবে যারা কর্ণফুলী দখল করেছেন তারা নিজে থেকে সরে গিয়ে কর্ণফুলীকে তার স্বমহিমায় প্রবাহ হতে দিন। না হয় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনগণকে সাথে নিয়ে আপনাদের নদীর অবৈধ দখল ছেড়ে দিতে বাধ্য করবে। তখন নিজেদের সম্পদ যাওয়ার পাশাপাশি কালো মুখোশও জনগণের সামনে উন্মুক্ত হবে।

কর্ণফুলী নদী শুধু চট্টগ্রামবাসীর নয়, এটি সমগ্র দেশের প্রাণভোমরা। কর্ণফুলীর স্রোত, নাব্যতা ও পানি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ।এ নদীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, নদীকে জীবন্ত রাখা দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী বর্তমানে দখলে দূষণে বিপর্যস্ত। নানাভাবে দখল হয়েছে নদী এবং এখনো হচ্ছে। আমরাই লিখেছি আজাদীতে, ‘দূষণ থেমে নেই বহু বছর ধরে। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধারে বিভিন্ন সময় বহু আলোচনা হয়েছে। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শোনা গেছে, অনেক প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস বাণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। বিপর্যস্ত কর্ণফুলীর শেষরক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্ণফুলী গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা’। কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা এসেছে। তবে আশার সংবাদ এই, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এর ফলে ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী। গত মার্চে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ রায় দেয়। রিটকারী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক এবং জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দীন খোকন।

মনজিল মোরসেদ বলেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী রক্ষায় জনস্বার্থে এইচআরপিবি একটি রিট আবেদন দায়ের করে। শুনানি শেষে হাই কোর্ট রায়ে নদীর ভেতরে থাকা সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিস দেন। ওই নোটিস পাওয়ার পর জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি হাই কোর্ট একটি রিট দায়ের করে এবং স্থিতাবস্থার আদেশ পায়। রিটে এইচআরপিবি পক্ষভুক্ত হয়ে রিট খারিজের আবেদন জানায়।

তিনি বলেন, শুনানি শেষে হাই কোর্ট রায়ে বলে, হাই কোর্টের দেওয়া কর্ণফুলী নদী রক্ষার রায়ের নির্দেশনা পালনে কোনো বাধা নেই। রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি আপিল বিভাগে যায়, যা খারিজ হয়ে গেল। এখন কর্ণফুলী নদীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা রইল না।

বলা জরুরি যে, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারে দিন দিন কর্ণফুলী নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে এই নদীর মতো অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্ণফুলীতেই চট্টগ্রাম বন্দর। দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো বিকল্প বন্দর নেই। দখলদূষণে কর্ণফুলী যদি গতিপথ হারায় তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কর্ণফুলী রক্ষায় সকল আয়োজন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে