কর্ণফুলী নদীর প্রায় ৬০ ফুট গভীর থেকে উদ্ধারকৃত দেড়শ’ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষের সাথে পাওয়া বিভিন্ন সামগ্রী জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ চেয়েছে। এগুলো জাদুঘরের ম্যারিটাইম গ্যালারিতে স্থাপন ও প্রদর্শিত হলে তরুণ প্রজন্ম নৌ–বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং বিশ্বব্যাপী নৌযান শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে পত্র দিয়ে উদ্ধারকৃত জিনিসপত্রগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় হিরামনি স্যালভেজ নামের একটি বেসরকারি উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের ৬ ও ৭ নং জেটির মধ্যবর্তী স্থানের বিপরীত পাশে ডাঙ্গার চর এলাকা থেকে প্রায় ৮ মাসের চেষ্টায় দেড়শ’ বছর আগে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ উদ্ধার করে। ইতোমধ্যে জাহাজটি থেকে উদ্ধারকৃত নানা সামগ্রী থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জাহাজটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেভিনিউ কালেকশনের কাজে ব্যবহৃত হতো। ১৫০ শত বছর আগেকার কয়লা ইঞ্জিনের জাহাজ থেকে বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ শত ব্রিটিশ শাসনামলের মুদ্রা, তামা–পিতল ও রূপার তৈষজপত্র যেমন, প্লেট, হাড়ি–পাতিল, গ্লাস, পানির পাত্র, চামচ, নকশা করা মোমবাতির দানি, ফুলের টপ, আলমারির নকশা, হ্যারিকেন ও কুপি, হাতির দাঁত, দূরবীনসহ নানা সামগ্রী পাওয়া গেছে।
বিষয়টি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানতে পেরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বরাবরে পত্র দিয়ে উদ্ধারকৃত জিনিসপত্রগুলো জাদুঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন যে, উদ্ধারকৃত জাহাজটিতে ব্যবহৃত বাইনোকুলার, প্রপেলার, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিজ্ঞান জাদুঘরের ম্যারিটাইম গ্যালারিতে স্থাপন ও প্রদর্শন উপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন। এতে তরুণ প্রজন্ম নৌবিজ্ঞানের ঐতিহাসিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে এবং বিশ্বব্যাপী নৌযান শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তিনি উদ্ধারকৃত জাহাজটির বর্ণিত যন্ত্রপাতি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে প্রেরণের অনুরোধ করে জানিয়েছেন যে, জাদুঘরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম শীঘ্রই চট্টগ্রাম বন্দরে যাবে।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জিনিসপত্রগুলো সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দর থেকে হিরামনি স্যালভেজের সাথে যোগাযোগ করে জিনিসপত্রগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে হিরামনি স্যালভেজের পরিচালক মোহাম্মদ জিহাদ হোসেন দৈনিক আজাদীকে জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা টানা ৮ মাস কঠোর পরিশ্রম এবং টাকা খরচ করে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করি। বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের চুক্তি রয়েছে যে, নিজেদের খরচে উদ্ধার করার পর জাহাজটির সবকিছুই আমাদের। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি আমাদেরকে উদ্ধার কাজের খরচ শেয়ার করে তাহলে আমরা জিনিসপত্রগুলো বন্দরকে দিয়ে দেবো।