করোনাকালেও হোম কনজাম্পশন বন্ডে রেকর্ড রাজস্ব আদায়

বিদায়ী অর্থবছরে ৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের আওতায় ‘হোম কনজাম্পশন বন্ড’ খাতে বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৯ প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। এছাড়া গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ৩৬৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। বন্ড কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের এই বিশাল প্রবৃদ্ধি অবশ্যই আশা জাগানিয়া। এবার হোম কনজাম্পশন বন্ডের ৬টি বেসরকারি এবং ৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। বন্ড কর্মকর্তাদের তদারকির কারণেও এই সাফল্য এসেছে। উল্লেখ্য, স্থানীয় শিল্পের মধ্যে চিনি, ভোজ্য তেল, চামড়া, ইস্পাত, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বৈদ্যুতিক, ইলেকট্রনিঙ এবং তামাক প্রস্তুতকারকসহ বেশ কয়েকটি কারখানা হোম কনজাম্পশন বন্ডের সুবিধা ভোগ করে থাকে। তবে বর্তমানে কোনো নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। হোম কনজাম্পশন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বন্ড সুবিধায় শিল্পপণ্যের কাঁচামাল এনে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সেই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরি করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করে। বাজারজাতকালে প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ককর পরিশোধ করে।
বন্ড কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, হোম কনজাম্পশন বন্ডের ছয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-এস আলম স্টিল, এস আলম সুগার, টিকে গ্রুপের মালিকানাধীন কর্ণফুলী স্টিল, পিএইচপি স্টিল, কেওয়াইসিআর কয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও আফতাব অটোমোবাইলস। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তিন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- গাজী ওয়্যারস লিমিটেড, ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড এবং জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং লিমিটেড (জেমকো)।
গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুলাইয়ে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয় ১৪১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ১২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, আদায় হয় ৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয় ১২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয় ১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, আদায় হয়েছে ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মার্চে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, আদায় হয় ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, এপ্রিলে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ কোটি ১ লাখ টাকা, আদায় হয় ৪৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয় ৭১ কোটি ৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে জুনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা, বিপরীতে রাজস্ব আদায হয়েছে ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, হোম কনজাম্পশন বন্ডে ৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি নি:সন্দেহে বড় সাফল্য। বন্ড ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি। যে কারণে আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। যদিও রাজস্ব আদায় আমাদের মূল কাজ নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় মাছ ধরতে এসে লাশ হলেন ঈদগাঁওয়ের জেলে
পরবর্তী নিবন্ধডিএপি সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ