আহা মাথার ওপরে অযুত স্নেহসান্নিধ্যের বিশালাকৃতির উদার নীলাকাশ! নিশ্চিত নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো একটা জীবন! কতো ভাগ্যবান আমরা! যে কোন অজুহাতেই যাঁদের আশীর্বাদ ঝরে পড়ে অতিব্যস্ত, ডিজিটাল যুগের সন্তানের মাথার ওপর! দিনরাত যাঁরা প্রার্থনায় থাকেন আমাদের সফলতার জন্য। সামান্যতম মন খারাপ বা এক আধটু সর্দি কাশি হলেই যাদের মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ে। মন্দির মসজিদ আর উপাসনালয়ে গিয়ে নিজের প্রাণের বিনিময়ে সন্তানের যাবতীয় কল্যাণচিন্তায় নিমগ্ন যাঁরা! শৈশবে হামাগুড়ি থেকে উঠে দাঁড়ানো পর্যন্ত যাদের আদর সোহাগে আধো বোলের গাঁথুনি, অ আ ক খ, ভোর হলো দোর খোলো, টুইংকেল টুইংকেল আরো আরো কতোশতো ছড়া ছবি পাঠ তাঁদের কারিশমায়! কতোশত, চকলেট, চুইংগাম-এর প্রতুলতা যাঁদের ভালোবাসা উপচে পড়েছে দিন, মাস, বছর জুড়ে সেই বৃদ্ধ মা, বাবা এখন কী খেতে চান!জানতে চাওয়া হয়েছে কী! সেই জন্মদাতা মা-বাবা বাড়ির বয়স্ক অভিভাবক কেমন আছেন? সুন্দর সোনালি অতীত ও কর্মজগতের কেবলই স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান যাঁরা! ভাবনার অতল সমুদ্র থেকে বের করে আনেন রঙিন স্মৃতির পসরা! পরিবার আর সন্তান সন্ততিই ছিলো যাঁদের ধ্যান জ্ঞান প্রাণ, কেমন যাচ্ছে উনাদের আটপৌরে জীবন! এমন বীভৎস অতিমারীতে যাদের জীবন করোনা নামক খড়গের আগায় ঝুলছে তাঁদের কথা, আমরা কতোটা ভাবছি? জেনারেশন গ্যাপ বা গতিময় জীবনের প্রতিযোগিতায় উনাদের শেষ সময়টাকে নির্বোধের মতো তছনছ করে দিচ্ছি না তো! তাদের কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, আবেগকে বুড়ো বয়সের ভিমরতি বা মনোবিকার বলে অসম্মান করছি না তো! কোন একসময় যাঁদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ও সর্বোৎকৃষ্ট বলে সম্মানিত হতো আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চারপাশের আবহকে প্রতিকূলতা ভেবে মানসিক যন্ত্রণা পাচ্ছেন না তো! ফেলে আসা দিনগুলোকে নিয়ে যেন কোন দুঃখবোধ জন্ম না নেয়,বরং বর্তমানটাকেই যাতে সেরা সময় ভেবে অনেকটা স্বস্তিতে থাকেন সেই দিকটাকে বিবেচনায় রাখছি কি!একাকীত্ব বা অহেতুক বেঁচে আছি ভেবে কোনরকম মানসিক যন্ত্রণা যেন তাঁদের পোহাতে না হয়। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি মনের সুস্থতার বিষয়টিকে অবহেলা করছি না তো! আমাদের অকুন্ঠ ভালোবাসা, সহমর্মিতার সৌন্দর্য, সহানুভূতির প্রয়াসে তাদের সেবা করার সুযোগটি হাতছাড়া করা একান্তই অনূচিত।