করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে গত ১ জুন থেকে নগরীর সিআরবি এলাকার রেলওয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। সরাসরি রোগী ভর্তির সুযোগ এই হাসপাতালে ছিল না। করোনা থেকে মোটামুটি সুস্থ কিন্তু আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন, এমন রোগীদের জেনারেল হাসপাতাল থেকে এখানে স্থানান্তর করা হতো।
রেলওয়ে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে গতকাল পর্যন্ত ভর্তিকৃত মোট রোগীর সংখ্যা ১২৩ জন। আর এসব রোগীর চিকিৎসা, খাবার ও আনুষঙ্গিক সব ধরনের খরচ বাবদ এ পর্যন্ত সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। হিসেবে হাসপাতালটিতে রোগীপ্রতি সরকারি ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩২ হাজার টাকা।
কোন মাসে কত রোগী : হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর প্রথম মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তি করা হয় এখানে। ওই মাসে ১০৪ জন রোগীকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেলওয়ে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জুলাই মাসে ৭ জন রোগী ভর্তি হলেও আগস্ট মাসে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। চলতি সেপ্টেম্বর থেকে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এ হাসপাতাল। চলতি মাসে গতকাল পর্যন্ত ১২ জন এখানে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১২৩ জন রোগীর ভর্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক ডা. সৈয়দ নুরুল আবছার।
সরকারি বরাদ্দ ও খরচ : করোনা ডেডিকেটেড আলাদা হাসপাতাল হলেও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই রেলওয়ে হাসপাতালের সব ধরনের খরচ নির্বাহের নির্দেশনা ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। হাসপাতালটির রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ ও খাবারসহ আনুষঙ্গিক সব ধরনের খরচ বাবদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বরাদ্দ ব্যয়ের সুযোগ ছিল জুন মাসের আগ পর্যন্ত। প্রথম দফায় বরাদ্দকৃত ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ২৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা খরচ হলেও বাকি ১৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ।
তবে জুন পরবর্তী সময়ে আনুষঙ্গিক সব খরচ বাবদ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে তিনটি (জেনারেল, হলি ক্রিসেন্ট ও রেলওয়ে) হাসপাতালের খরচ বাবদ ৯০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, এর মধ্যে রেলওয়ে হাসপাতালে খরচ বাবদ ১০/১৫ লাখ টাকা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় ২৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা খরচ এবং পরবর্তী ব্যয় বাবদ ২য় দফায় আরো ১০/১৫ লাখ টাকা চাহিদাপত্র দেওয়ায় হাসপাতালটির সব মিলিয়ে খরচের অংক দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। যদিও চাহিদার শতভাগ অনুমোদন পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সব মিলিয়ে খরচ বাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা ধরে হাসপাতালটিতে রোগী প্রতি সরকারি ব্যয় দাঁড়ায় সাড়ে ৩২ হাজার টাকা। অর্থাৎ হাসপাতালটিতে একজন রোগীর পেছনে সব ধরনের খরচ বাবদ সাড়ে ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে সরকারের।
ব্যক্তিগত অনুদান : সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার আগ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, এর বাইরে সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খানসহ আরো কয়েকজন পিপিই ও সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করেন। চুয়েটের শিক্ষকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। যা দিয়ে হাসপাতালের প্রয়োজনীয় আসবাব কেনা হয় বলে জানান হাসপাতালটির আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডা. শাহিদা আকতার। এর বাইরে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তেমন কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল : প্রথম দিকে মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয় রেলওয়ে হাসপাতালের। পরবর্তীতে ১০ জন চিকিৎসক ও ৯ জন নার্সকে পদায়ন করা হয়। এছাড়া আউটসোর্সিংয়ে একজনসহ সাপোর্টিং স্টাফ দেওয়া হয় ১৪ জন।
উল্লেখ্য, কাগজে-কলমে একশ শয্যার করোনা হাসপাতাল হিসেবে দেখানো হলেও ৫৪টি শয্যায় রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল হাসপাতালটিতে। চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন এমন রোগীদের এই হাসপাতালে রাখার সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে সিলিন্ডার সংখ্যা ২১টিতে উন্নীত হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার বৃদ্ধির পর অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন, এমন কিছু সংখ্যক রোগীকে এখানে স্থানান্তর করা হয় বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ একজন রোগীকে শনিবার ছাড়পত্র দেওয়ায় গতকাল থেকে হাসপাতালটি রোগীশূন্য বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।