মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটা সময়োপযোগী কাজের শুভ সূচনা করেছে। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই আইসোলেশন সেন্টারটি ১৫ শয্যার মধ্যে ১০টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা রোগীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শয্যা সংখ্যা ২০–এ উন্নীত করা হবে। এখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফ সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায় র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট ও জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ। আমরা আগেও ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবেলা করেছি, এবারও ইনশাআল্লাহ পারব। মেয়র আরো বলেন, করোনা অমিক্রন এখন আবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অমিক্রন ডেলটার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক, কারণ অনেক সময় জ্বর বা কাঁশি ছাড়াই শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। আমরা চাই কেউ উপসর্গ অনুভব করলে দ্রুত পরীক্ষা করুক, প্রয়োজনে এই সেন্টারে এসে আইসোলেশনে থাকুক। এখান থেকে গুরুতর রোগীদের ভেন্টিলেটর সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে রেফার করা হবে। মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, শুধু করোনা নয়, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধেও চসিক সক্রিয় রয়েছে। ডেঙ্গুর জন্য আলাদা এন্টিজেন টেস্ট ও চিকিৎসা সেবা এখানে চালু আছে। ডেঙ্গুরোধে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে প্লাস্টিক, ডাবের খোসা, টব বা নির্মাণাধীন ভবনের পানি জমে থাকার স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। শুধু শহর নয়, নিজের ঘর ও বাসার দায়িত্বও নিতে হবে। তিনি জানান, চসিক এলাকায় মশক নিধন অভিযানে ক্লাব ও স্থানীয় সংগঠনগুলোকেও মেশিন ও ওষুধ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে যেন শহরে আর মশার উপদ্রব না থাকে। করোনার জীবাণু সংক্রমণ রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মেয়র আরো বলেন, ২০২০ সালে আমি প্রথম বলেছিলাম– ভাইরাল ডিজিজ দমনে ০.৫% ক্লোরিন সলিউশন খুবই কার্যকর। বাসা–বাড়ি, রাস্তা কিংবা হাসপাতাল পরিষ্কারে এই সলিউশন স্প্রে করলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বলা জরুরি যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য দেশে এখনও হাসপাতালগুলো সেভাবে প্রস্তুত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাঁচ বছর আগে ৬ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার ‘কোভিড–১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স ও প্যানডেমিক প্রিপারেডনেস’ প্রকল্প নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। নতুন করে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভের সময় রাজধানীতে এবং দেশের অন্যান্য শহরের হাসপাতালে খোলা বিশেষ করোনা ইউনিটে ব্যবহৃত আইসিইউ, এইচভিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ অন্যান্য সরঞ্জামকে ব্যবহারে উপযোগী করে রাখতে হবে। করোনার নতুন চারটি উপধরনের সিকোয়েন্সিংয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে করোনাভাইরাস উপধরনের গতিবিধি বিবেচনায় নিয়ে এর সংক্রমণ রোধে চিকিৎসা সম্পন্ন করা যায়।
তাঁরা বলেন, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা যে কত দুর্বল, সেটা বিগত করোনা মহামারির সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে। করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এবারও যাতে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি প্রয়োজন। আর কাজটি একা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নয়; জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থা ও বিভাগকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
মোট কথা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুখে মাস্ক থাকলে করোনা আক্রান্ত রোগীর নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরোনো ড্রপলেট মাস্ক ও মুখের মাঝখানে আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে এসে বাইরে দ্রুতি গতিতে না ছড়িয়ে কাছাকাছি মাটিতে গিয়ে পড়ে। ফলে কাছের মানুষের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। মাস্ক শুধু একজনের জন্য নিরাপদ নয়, তা আশপাশে দশজনকেও নিরাপদ রাখে। যতদূর সম্ভব কারও সঙ্গে করমর্দন বা কোলাকুলি বন্ধ রাখা ভালো। কারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তার আইসোলেশনে চলে যাওয়া জরুরি।