কোভিড-১৯ ঝড়ের তান্ডবে উড়ে যায় গত বছর মার্চ শেষের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় জাতীয় তথা সংসদ সদস্য পদের উপনির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হলেও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ঝুলে যায়। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন বলে টানা দশ মাস ঝুলে থাকে নির্বাচনটি। ঝুলতে ঝুলতে অনিশ্চয়তার গর্তে প্রায় তলিয়েই যাচ্ছিল। মারাও গেছেন কয়েক কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মাঝে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ শেষের পূর্বাহ্নে নগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনকে ৬ মাসের অন্তর্র্বতী প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তিনি বিদায়ী নির্বাচিত মেয়র থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। নির্বাচন কমিশন কোভিড-১৯ দূরের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অতিমারিটি তার তান্ডব চালু রাখে। কোভিড-১৯ তো ২০ পেরিয়ে ২১-এ ঢুকে পড়েছে মহাবিক্রমে! কখনো হাল্কা কখনো জোরালো সংক্রমণ, আবার কখনো চরিত্র বদল করে ভাইরাসটি পুরো বিশ্ব ব্যবস্থাকে চরম অস্বস্তির মাঝে ঠেলে দিয়েছে। টিকা উদ্ভাবন ও টানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফাইজার এনটেক এর টিকা প্রয়োগ শুরু হয় ইংল্যান্ডে। তাও ৮০ বয়সের বেশি বয়স্কদের সীমিত আকারে। এরমাঝে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হয় গত নভেম্বরে।
এ’পর্যন্ত প্রতিষেধক ও ওষুধ আবিষ্কার ছাড়াই অতিমারিটি প্রায় ২০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।
বাংলাদেশেও মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছুঁই ছুঁই। নমুনা টেষ্ট ছাড়া মৃতের কোন হিসেবও নেই। সব মিলিয়ে ২০২০ সাল ছিল করোনা আতঙ্কের বছর। এখনো ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর। অর্থনীতি, বেসামরিক বিমান পরিষেবা ও পর্যটন খাতকে বছর ধরে পুরোই লন্ডভন্ড করে দিয়েছে করোনা। কোটি কোটি মানুষ র্র্কমহীন। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। দেশে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে অতিমারি করোনা। সীমিত সামর্থ্যে সরকার মোটামুটি পরিস্থিতি সামাল দিলেও দেশে টিকা এখনো আসেনি। ভাইরাসটি দ্রুত চরিত্র বদলের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার উপর পুরো আস্থাও রাখতে পারছে না।
করোনা ক্ষতের মাঝেই আমরা নির্বাচন উপহার পেয়েছি। উপায়ও নেই। করোনা কখন নির্মুল হবে তার নিশ্চিত কোন বার্তা নেই। তাই সতর্কতা ছাড়া বিকল্প উপায়ও নেই। দলীয় ব্যানারে নির্বাচন। তাই নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার হবেই। সরকারি দল যেমন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে জয়ের বিকল্প চিন্তা করছে না। তেমনি বিরোধী দল বিএনপিও জয়ের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে ৮ জানুয়ারি থেকে। দু’’প্রধান দু’’দলের প্রার্থীই নতুন। সরকারি দল মনোনয়ন দিয়েছে, সজ্জন ও স্বচ্ছ রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে। বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনেরও ব্যাক্তি ইমেজ পরিচ্ছন্ন। তাঁরা দু’জনই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের আশা দেখছেন। তুলনায় রেজাউল করিমের চেয়ে শাহাদাত একটু দ্বিধায়। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি।
সে যা হোক নগরবাসী সংঘাত ও সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। আশা করি তাই করবেন নির্বাচন কমিশন। প্রচারণার প্রথম দিনে চকবাজারে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এখনো অনেক দূরে ২৭ জানুয়ারি। বিশ্বাস, করোনা ক্ষতের কথা বিবেচনায় নিয়ে সব প্রার্থী সচেতন ও সতর্ক হবেন। প্রচারণার বিধিনিষেধ মেনে নিজের এবং প্রচারকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দেবেন। মনোযোগ দেবেন সংঘাত এড়িয়ে চলার। করোনা আতঙ্কের মাঝে বিলম্বিত নির্বাচনটিতে যেন সংঘাত আতঙ্কের মেঘ ভারী না হয়, যত্নশীল হতে হবে সবাইকে। বিশ্বাস, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার পাব। নগরবাসী মেয়রসহ একসেট নতুন নেতৃত্ব উপহার পাবে। যাদের নেতৃত্বে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম উন্নয়ন ও সহমর্মিতার নতুন উচ্চতায় উঠে আসবে।