করাচি-চট্টগ্রাম রুটে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান জানালেন বন্দরের বেশি কিছু কার্যক্রম ও প্রবৃদ্ধির কথা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি রুট চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানিরপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আমদানি কন্টেনারের চাহিদা বাড়লে নিয়মিত করাচিচট্টগ্রাম রুট দিয়ে জাহাজ পরিচালনায় মালিকরা আগ্রহী। আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানিরপ্তানি হতো। নতুন এই রুট চালু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানিরপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। সাশ্রয়ী ব্যয় এবং সময়ে উভয় দেশের আমদানিরফতানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা করে মাঝপথে করাচি বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। জাহাজটির রুট ছিল দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে পাকিস্তানের করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর; এরপর ইন্দোনেশিয়ামালয়েশিয়াভারত হয়ে আবারও দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর। জাহাজটি ২৩০০ কন্টেনার পরিবহনে সক্ষম। কিন্তু আমদানির চাহিদা কম থাকায় জাহাজটি মাত্র ৩২৮টি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।

তিনি বলেন, বন্দরের নিউমুুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার জন্য পাবলিকপ্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে সরকারিবেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ছয় মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। বে টার্মিনালে বিদেশি প্রতিষ্ঠান পিএসএ সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে দুটি কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ওপেন ইকোনমিতে আপনি একা চলতে পারবেন না। আপনাকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। একা হয়তো চলতে পারবেন, কিন্তু অথনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে না, উন্নতি করা যাবে না। সুতরাং ইনক্লুসিভনেস লাগবে। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, বন্দরের স্বার্থে নেওয়া হবে। বন্দর যেখানে উপকৃত হবে, সাধারণ মানুষ যেখানে উপকৃত হবে, রাষ্ট্র যেখানে উপকৃত হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থের কোনো বিষয় নেই।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আনন্দের সাথে আপনাদের জানাতে চাই, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৮২ টিইইউএস, যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬,৯৮৬ টিইইউএস বা ৯ দশমিক ০১৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কোভিড অতিমারি, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ ও পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক ৫ হাজার কন্টেনারের স্থিতি ছিল। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মোট ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ অকুপাইড ছিল। বিগত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজের এভারেজ ওয়েটিং টাইম ৬ থেকে ৮ দিন থেকে একদিনে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগমনের পর জাহাজসমূহ অন এরাইভাল বার্থিং পাচ্ছে।

বন্দরের আর্থিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪২৫ অর্থবছরের গত ৪ মাসে ১,৬৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়কালের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। একই সাথে রাজস্ব উদ্বৃত্ত ২৮ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি। সেবার মান অক্ষুণ্ন রেখে রাজস্ব আয় আরো বৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব ব্যয় হ্রাস করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া চবকের বিনিয়োগের ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে চবক হতে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত সরকারের আমলে তৈরি সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় দেওয়া ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমূলক এবং অধিকতর ব্যবহারবান্ধব করতে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন সবগুলো আমরা গ্রহণ করছি।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক কন্টেনার সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ইয়ার্ডে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে ৪টি অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইড পরিবাহী ট্যাংক কন্টেনার সংরক্ষিত ছিল। কন্টেনারগুলো দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকায় উচ্চ তাপমাত্রায় বিস্ফোরিত হওয়ার ঝুঁকি বিরাজমান ছিল; যা বন্দরকে সার্বক্ষণিক ঝুঁকিতে রেখেছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দর হতে গত ২৭ অক্টোবর অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইড ভর্তি ৪টি ট্যাংক কন্টেনার নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর বিস্ফোরণের ঝুঁকি হতে শঙ্কামুক্ত হয়েছে। এছাড়া বিপজ্জনক পণ্যের ৯টি কন্টেনার রয়েছে, যা শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান, সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজালিয়াতি করে সিগারেট খালাস : ‘অ্যাসাইকুডা’র নিরাপত্তা জোরদার
পরবর্তী নিবন্ধমালয়েশিয়া পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ধর্ষক