পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বৃদ্ধি, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস করা– যেন জনগণ পুলিশকে আপন ভাবতে শেখে, জনগণের মধ্যে পুলিশভীতি ও অপরাধভীতি হ্রাস করা, পুলিশকে সহায়তার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সাহসী করা, মানুষের মধ্যে পুলিশকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা হ্রাস করা, জনগণকে পুলিশি কার্যক্রম ও সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জানানোসহ বেশ কিছু লক্ষ্য নিয়ে ২০০৭ সালে গঠিত হয়েছিল কমিউনিটি পুলিশ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী দমনে জন সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্যোগে পালন করা হয় কমিউনিটি পুলিশিং ডে– ২০২৩। ‘পুলিশ জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সকালে দামপাড়া পুলিশ লাইন প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ডে–২০২৩ এর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এবং চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশের আহ্বায়ক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের সভাপতিত্বে পুলিশ লাইন্সের মাল্টিপারপাস শেডে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশের আহবায়ক এম এ মালেক।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতি করছি। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যকে যেভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সে দৃশ্য আর দেখিনি। একসময় যে জাতিকে কাঙালের জাতি বলা হতো, সেই বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে আমেরিকার প্রেসিডেন্টও ভাবেন শেখ হাসিনার হাতে আলাদীনের চেরাগ আছে কিনা। আমরা পদ্মা সেতু করেছি, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে করেছি, মেট্রোরেল করেছি, কঙবাজার পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছি, টানেল করেছি। করোনায় এদেশের কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। করোনার টিকা যখন প্রথম আবিষ্কার হলো, সুইডেনের মতো উন্নত দেশ টিকা পাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছেন। এত অর্জনের পরও একাত্তরের পরাজিত শক্তি বারে বারে চায় এদেশকে পেছেনে টেনে নিয়ে যেতে। আমাদের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা এটি করছে। মেয়র বলেন, আমাদের অবস্থা হয়েছে, সুখে থাকতে ভূতে কিলানোর মতো। দ্রব্যমূল্য নিয়ে রব উঠেছে। অথচ সৌদি আরবে যে রুটি ২ রিয়ালে কিনে খেয়েছিলাম, সেই রুটির মূল্য এখন ৪ রিয়াল। মালয়েশিয়ায় ৬ রিঙ্গিতে যে খাবার পাওয়া যেত তা কিনতে এখন খরচ হয় ১৩/১৪ রিঙ্গিত। সেদিক থেকে আমরা অনেক ভালো আছি। তিনি আরও বলেন, পুলিশকে সাহায্য করতেই কমিউনিটি পুলিশের সৃষ্টি। জনতা–পুলিশ একত্রিত হয়ে কুচক্রি মহলের বিরুদ্ধে যদি পথে নামি তবে তারা কখনোই সফল হবে না।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আহ্বায়ক এম এ মালেক বলেন, শান্তি না থাকলে কখনো উন্নতি হয় না। বিশ্বের যত উন্নত দেশ, তার প্রতিটিতে ৩০০/৩৫০ জনের জন্য একজন পুলিশ নিয়োজিত। আমাদের দেশে একজন পুলিশের পক্ষে ১০০০ জন মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমি মনে করি পুলিশের সহায়ক শক্তি হলো কমিউনিটি পুলিশ। আমরা সবসময় ভালো কাজের সাথে আছি। আমাদের কাজ প্রহরীর মতো। দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতিটি সদস্য পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাবে এটাই সকলের প্রত্যাশা, আমরাও তা বিশ্বাস করি।
সভাপতির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, একাত্তরের সেই অপশক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণ পুলিশের হাতে হাত রেখে টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আঁখি মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন প্রমুখ। এসময় সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া, উপ–পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশসহ পুলিশের অন্যান্য উধ্বর্তন কর্মকর্তা, মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।