কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেনার পরিবহন বন্ধ থাকায় ভয়াবহ রকমের সংকটে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ কন্টেনার নিয়ে হা–হুতাশ শুরু হয়েছে। অপরদিকে ঢাকার আমদানিকারক এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে হাহাকার। রেলযোগে কন্টেনার পরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পুলিশ র্যাব কিংবা বিজিবির সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে রেলওয়ে ওয়াগন চালুর ব্যবস্থা করার জন্য গতকাল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে আইসিডি। কাস্টমস বন্ডেড এই আইসিডি থেকে ঢাকার আমদানি রপ্তানিকারকেরা পণ্য আনা নেয়া করেন। ঢাকা আইসিডির নামে আমদানিকৃত পণ্যসমূহ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। একইভাবে ঢাকার রপ্তানিকারকদের পণ্য ঢাকা আইসিডিতে গ্রহণ করে তা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি রেলওয়ে ওয়াগন চলাচল করে। এগুলোর মাধ্যমে ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করা হয়। কিন্তু গত ১৯ জুলাই থেকে ট্রেন যোগে কন্টেনার পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। দেশব্যাপী রেল চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণার সাথে সাথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন কারখানার কাঁচামালসহ নানা পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়তে থাকে। একইভাবে ঢাকার পণ্যও আটকা পড়তে থাকে কমলাপুরে।
চট্টগ্রাম বন্দরে আইসিডিগামী কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়ে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ১৬শ’ টিইইউএস। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ কন্টেনার কিভাবে ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হবে তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ মারাত্মক রকমের সংকটে পড়েছে। এসব কন্টেনার কমলাপুরে পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন কারখানার কাঁচামাল সংকটসহ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিকারকেরা প্রতিদিনই ফোনে খবরাখবর নিলেও ট্রেন চলাচল না করায় কন্টেনারগুলো পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। আমদানিকারকদের মাঝে হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাধিক আমদানিকারকের উদ্বৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমদানিকারকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বেশি। তাদের কারখানায় সময়মতো এসব কাঁচামাল না পৌঁছানোর ফলে উৎপাদন সম্ভব হবে না। ফলে এসব পণ্য বিদেশি ক্রেতার কাছে সময়মতো পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এসব পণ্য ক্রেতা যদি গ্রহণ না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকদের পথে বসতে হবে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
অপরদিকে কমলাপুর আইসিডিতেও প্রচুর কন্টেনার আটকা পড়ে আছে। সচরাচর কমলাপুরে বন্দরমুখি কন্টেনার থাকে দুইশ’ টিইইউএস এর কাছাকাছি। সেখানে গতকাল পাঁচশ’ টিইইউএস এর মতো কন্টেনার আটকা পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে রপ্তানিমুখী পণ্য বোঝাই এবং খালি কন্টেনার রয়েছে। পণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো সময়মতো বন্দরে না পৌঁছার ফলে এগুলো রপ্তানিতে সমস্যা হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রয়েছে এমন কন্টেনারগুলো ইউরোপ কিংবা আমেরিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে মাদার ভ্যাসেল মিস করার আশংকার কথাও বলেন তিনি। বিভিন্ন আমদানিকারক এবং রপ্তানিকারকেরা বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট জরুরি পত্র পাঠিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কন্টেনার পরিবহন শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাবের সহায়তা নিয়ে কন্টেনার পরিবহনের ট্রেন চালু করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক রেলওয়েকে চিঠি পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন।