যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার। আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণে কে প্রভাব বিস্তার করবে এ নিয়ে বিশ্ববাসীর নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে সাতটি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে কোনটি কোন দলের দিকে ঝুঁকে, তা বুঝতে বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দীর্ঘ দিন ধরেই ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের সিংহভাগ ভোট নির্দিষ্ট একটি দলের বাক্সে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সাতটি অঙ্গরাজ্য। এই প্রদেশগুলোকে ‘সুইং স্টেটস’ বা ‘দোদুল্যমান প্রদেশ’ বলা হয়ে থাকে। কারণ এই প্রদেশগুলির রাজনৈতিক আনুগত্য বদলানোর ঐতিহ্য রয়েছে। আর তাই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস–দুজনেরই লক্ষ্য এই সাত প্রদেশের রায়কে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা।
১৯৮০ থেকে আমেরিকার বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকানরা জয়ী হয়ে আসছেন। দলের রং অনুসারে এই প্রদেশগুলিকে ‘রেড স্টেটস’ বলা হয়ে থাকে। আবার ১৯৯২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি প্রদেশে জয়ী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। দলের রং অনুসারে এই প্রদেশগুলিকে ‘ব্লু স্টেটস’ বলা হয়ে থাকে। এর বাইরে আছে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো। প্রায় দশটি অঙ্গরাজ্যকে এই তকমা দেওয়া হলেও এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাতটি প্রদেশের ফল একেবার অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। এই সাত প্রদেশ হল অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন। একটি সমীক্ষা অনুসারে, এই সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং নেভাদায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে কমলা। আর নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া আর অ্যারিজোনায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।
জর্জিয়া : ২০২০ সালে জর্জিয়ায় জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। ১৯৯২ সালের পর সেই প্রথম ওই প্রদেশে জয়ী হয় ডেমোক্র্যাটরা। জর্জিয়ার ভোটারদের মধ্যে বড় একটি অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
নেভাদা : এই প্রদেশে মাত্র ছয়টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ লাতিন বংশোদ্ভূত, এশীয়–আমেরিকান এবং কৃষ্ণাঙ্গ। ঐতিহাসিকভাবে এই ভোট কমলার দিকে যাওয়ার কথা। কিন্তু টালমাটাল অর্থনীতির সমস্যা এই ভোটারদের একাংশকে ট্রাম্পমুখী করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
মিশিগান : ১৫টি ইলেক্টোরাল ভোট সম্বলিত এই প্রদেশ দীর্ঘ দিন ধরে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে ২০১৬ সালে এই মিশিগানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই প্রদেশে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেন আরব–আমেরিকানরা। এদের একাংশ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনই ইজরায়েলকে সমর্থনের প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। এই পরিস্থিতিতে এখানে বাজিমাতের আশা দেখছে রিপাবলিকানেরা।
পেনসিলভেনিয়া : এক সময় এই প্রদেশটিও ডেমোক্র্যাটদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ ছিল। কিন্তু ফিলাডেলফিয়া কিংবা পিটসবার্গের মতো শহরগুলোতে শিল্পায়নের পরিস্থিতি এখানকার ভোটারদের একাংশকে কমলার দলের প্রতি বিমুখ করে তুলেছে।
অ্যারিজোনা : ২০২০ সালে এই প্রদেশে ১০ হাজারের একটু বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুঞ্জন অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট অ্যারিজোনার ভোটারেরা। এই প্রদেশটি মেঙিকো সীমান্তবর্তী। সে কথা মাথায় রেখে অভিবাসন নীতি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন ট্রাম্পও।
নর্থ ক্যারোলাইনা : গত ৫০ বছরে এই প্রদেশে অধিকাংশ সময়েই জয়ী হয়েছে রিপাবলিকানেরা। কিন্তু ২০০৮ সালে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয়ী হন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বহু কলেজ পড়ুয়ার বাস এই প্রদেশে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন লাতিন বংশোদ্ভূত, শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গেরাও। মিশ্র এই প্রদেশে শেষ হাসি কে হাসবেন, সেটাই এখন দেখার।
উইসকনসিন : প্রাথমিক সমীক্ষায় এই প্রদেশে বাইডেনের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তবে কমলা প্রার্থী হওয়ার পর এই ব্যবধান ক্রমশ কমতে থাকে। ভোটারদের উজ্জীবিত করতে রিপাবলিকান পার্টি তাদের জাতীয় কনভেনশনও এই প্রদেশে করেছিল। তার পরেও প্রদেশটি ধরে রাখা যাবেই, এমনটা জোর গলায় দাবি করতে পারছেন না রিপাবলিকানেরা। খেলা ঘোরানোর আশায় ডেমোক্র্যাটেরাও।