আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের জেরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারেও কমছে ভোজ্যতেলের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাম ও সয়াবিন উভয় তেলের মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে পাইকারি বাজারে দরপতন হলেও খুচরা বাজারে ভোক্তারা সরাসরি কোনো সুফল পাচ্ছেন না। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মাঝখানে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট হওয়ায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে এখন ভোজ্যতেলের বাজার নিম্নমুখী। তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬২০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪ হাজার ৭২০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১০০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ২৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে ওঠে।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী এএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল আলম লিটন বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক বাজার কমার প্রভাবে মূলত দাম কমছে। এমনকি ভোজ্যতেলের বাজার এখন সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে ভোজ্যতেলের মিল হাতে গোনা। সরকার চাইলে এই মিলগুলোতে তদারকি করা একদম সহজ বলে মনে করি। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে খুব ধীরগতিতে। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত এনে কয়েক দফায় ভোজ্যতেলের দাম বৃৃদ্ধি করেছেন। কিন্ত আন্তর্জাতিক বাজার কমলেও দাম সেভাবে কমানো হয় না। উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ১২ জুলাই থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম খুচরায় ৮ টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৫৯ টাকায় বিক্রি করা হবে। একইভাবে বোতলের সয়াবিন তেল লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৭৯ টাকায় বিক্রি করা হবে। এছাড়া খোলা পাম তেলের নতুন দাম হবে প্রতি লিটার ১২৮ টাকা।
.