কন্সটেবলের কব্জি বিচ্ছিন্ন করার মূল হোতা, মা-স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

কন্সটেবল জনির বিচ্ছিন্ন কবজি সংযোজন

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৮:১৪ অপরাহ্ণ

লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের আঁধার মানিক লালারখিল এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (১৫ মে) রাতে থানার এএসআই মো. মফিজুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ঘটনার মূলহোতা কবির আহমদ (৩০), তার স্ত্রী রুবি আক্তার (২৮) ও মা মোস্তফা বেগমকে (৫৫) আসামি করা হয়েছে।

আজ সোমবার (১৬ মে) ভোররাতে পার্বত্য লামা উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্ত্রী রুবি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, গত ২৪ মার্চ অনধিকার প্রবেশ ও মারামারির অভিযোগে পদুয়া লালারখিল এলাকার আবুল হোসেন কালু বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় একই এলাকার মৃত আলী হোসেনের পুত্র কবির আহমদকে আসামি করা হয়।

গতকাল রবিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের একটি দল।

এ সময় আসামি কবির আহমদ গ্রেপ্তার এড়াতে ধারালো দা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে দায়ের কোপে কন্সটেবল মো. জনি খানের বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া পুলিশের আরেক কন্সটেবল শাহাদাত হোসেন ও মামলার বাদী আবুল হোসেন কালু আহত হন।

তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কন্সটেবল জনি ও আবুল হোসেন কালুকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

একইদিন আশংকাজনক অবস্থায় কন্সটেবল জনিকে হেলিকপ্টার যোগে রাজধানীর আল-মানার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর পরই আসামি কবির আহমদ পালিয়ে যায়।

এদিকে, দীর্ঘ সাড়ে ৯ ঘণ্টার অপারেশনে আসামির দায়ের কোপে পুলিশ কন্সটেবল মো. জনি খানের বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের কবজি জোড়া লাগানো হয়েছে।

রবিবার (১৫ মে) রাজধানীর মোহাম্মদপুরস্থ আল-মানার হাসপাতালে বিকেল ৫টা থেকে রাত ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টানা ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।

সোমবার (১৬ মে) বেলা ১২টায় গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের অপারেশন্স ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শাখার পরিচালক ডা. মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি জানান, অপারেশনটি খুবই জটিল ছিল। একটা মানুষের সম্পূর্ণ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া হাতে অনেকগুলো অংশ থাকে। সেগুলোকে আলাদা করে সিরিয়ালি বের করতে হয়েছে। এরপর টানা ৮ ঘণ্টা ৪০ মিনিট অপারেশন করতে হয়েছে। এর আগে অপারেশন পূর্ববর্তী আরও এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। সবমিলিয়ে সাড়ে নয় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।

ডা. মো. শহিদুল্লাহ বলেন, “রোগী এখন সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। তার হাতের স্বাভাবিক রং চলে এসেছে। নার্ভ যেগুলো জোড়া দেওয়া হয়েছে সেগুলোও কাজ করতে শুরু করেছে। হাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় হাতেও উষ্ণতা চলে এসেছে। আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত এমন যেসব রোগীর চিকিৎসা দিয়েছি তারা প্রত্যেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। আশা করছি, তিনিও দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যদের চিকিৎসক দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন। তারা হলেন হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন ডা. হাসান নাজির উদ্দীন সুমন, ডা. শাকেরা, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আলাউদ্দীন ও ডা. মোস্তফা কামরুল ইসলাম।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, পুলিশের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অপরাধে ৩ জনকে আসামি করে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

ঘটনার মূলহোতা কবির আহমদকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলার পর তার স্ত্রী রুবি আক্তারকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

এছাড়া ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্সটেবল জনি খানের বিচ্ছিন্ন হওয়া কব্জি জোড়া লাগানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানান ওসি আতিকুর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যাপসের সহায়তায় সিএনজি যাত্রীর টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধফুটপাত ও রাস্তা দখল, ১৩ ব্যবসায়ীকে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা