মালিকের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হলো সাউন্ড মেকানিক হাশেম খানকে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হাশেমের স্ত্রী জরিনা বেগম আর্তনাদ করতে করতে সে কথাই জানালেন। জরিনা বেগম বলেন, আগ্রাবাদ মালিপাড়ায় হাশেমের টেলিভিশন মেরামতের দোকান ছিল। হাশেম টেলিভিশন মেরামতের পাশাপাশি সাউন্ডবক্সের মেকানিক হিসেবে কাজ করত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রঙ্গিপাড়ার একটি ক্লাবের পক্ষ থেকে সাউন্ডবক্স এবং ৭০টি মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল নিয়ে র্যালি বের করা হয়। সাউন্ডবক্স ভাড়া নেয়া হয় রঙ্গীপাড়ার বাসিন্দা রোমেন চৌধুরী থেকে। সাউন্ডবক্স দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে রোমেন চৌধুরী র্যালিতে পাঠান হাশেম ও সাইফুলকে। মারামারি হচ্ছে দেখে সাইফুল পালিয়ে গেলেও সাউন্ডবক্স পাহারা দিয়ে রাখেন হাশেম। মারামারির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় হাশেমের।
সাইফুলের মতো পালিয়ে গেলে সাউন্ডবক্সগুলো হয়তো ভাঙচুর করতো হামলাকারীরা। কিন্তু হাশেম প্রাণে বেঁচে যেতেন। হাশেমের ১১ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার নাম সুমাইয়া।
সাউন্ডবক্সের মালিক রোমেন চৌধুরী নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে জানান, পিকআপে নেয়া এক জোড়া সাউন্ড বক্স ভাড়া নেয়া হয়েছিল তার থেকে। রোমেনের কর্মচারী হিসেবে হাশেম ও সাইফুল ছিল সাউন্ডবক্সগুলোর দায়িত্বে।
হাশেমের সাথে থাকা রোমেনের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সাউন্ডবক্স বাজানো হচ্ছিল। আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্কের সামনে রাস্তায় মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল দিয়ে কসরত দেখানো হচ্ছিল। এসময় গাড়ি আটকে যায়। একটি রিকশা থেকে নেমে একজন তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে। সেখানে হাতাহাতি হয়। পরে আবার সে লোকজন ডেকে আনে। তখন মারাামরি শুরু হলে আমি পালিয়ে যাই। পরে এসে দেখি, হাশেম ভাইকে ছুরি মেরেছে।
হাশেমের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, আমার স্বামী সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়। ২টায় বাসায় ফিরবে বলেছিল। আমাকে বলেছিল, ভাত রান্না করতে। আমি রান্না করেছি। দুপুর ১টার দিকে শুনতে পাই, হাশেমকে মেরে ফেলেছে। আমার মা-বাবা কেউ নাই। আমার স্বামীকেও মেরে ফেলেছে। আমার তো আর কেউ থাকল না। আমাকে আর আমার মেয়েকে কে দেখবে?