কন্যা দিবস নিয়ে আমরা ভার্চুয়াল জগতে খুব ভালো ভালো পোস্ট দেখছি, এ ব্যাপারটা আমরা খুব পজিটিভভাবে নিচ্ছি – হয়তো ভাবছি, বাংলাদেশের মেয়েরা এবার সবকিছুতে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবে। কিন্তু আফসোস হলো এটাও সত্যি বাংলাদেশে এখনো বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত বাঙালিদের ঘরে কন্যা সন্তানরা বড় হয় একটা ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে, প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় এ তুমি এই পৃথিবীতে কন্যা হয়ে এসে বড্ড অন্যায় করে ফেলেছো। তুমি আমাদের কাছে একজন বোঝা। তাকে প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেওয়া হয় সে পরের বাড়ির কেউ একজন। সে বাবার টাকায় খাচ্ছে দাচ্ছে, সেজন্য তাকে লেখাপড়ায় খুব ভালো হতে হবে যদি তার একটুও এদিক ওদিক হয় তবে অন্যদের সাথে তুলনা করতে করতে তার আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নিয়ে আসা হবে। তার বিয়ের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতে হবে একথা প্রতিমুহূর্তে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যদি কন্যাসন্তানদের পর ঘরে ছেলে আসে তাহলে তো মা বাবা ভুলেই যায়.. কন্যা সন্তানদেরও ভাইয়ের মতো মা বাবার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে, ভাইয়ের পাতে বড়ো মাছের টুকরো, মুরগীর রান যেমন জুড়ে থাকে, বোনদেরও ইচ্ছে করে খেতে।
ভাইয়ের মতো নতুন নতুন পোশাক পরতে ইচ্ছে করে। নতুন নতুন খেলনা পেতে ইচ্ছে করে কিন্তু না, সেই সব তথাকথিত শিক্ষিত অশিক্ষিত মা বাবা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে ছেলে এবং মেয়ের তফাৎ টা বুঝিয়ে দেয়, ছেলে সন্তান তাদের কাছে সর্বস্ব। এসব দেখে যে কন্যা সন্তানের বুকের ভিতরটা যে দুমড়ে–মুচড়ে যায় সেটা বাবা–মা কখনোই বুঝতে চায় না, কন্যা সন্তান একটু দেখতে ভালো হলে আশেপাশের ছেলেরা যখন ইভটিজিং করে, সেটা যে কন্যাসন্তানের অপরাধ নয় সেটুকু মা–বাবার বুঝার ক্ষমতা থাকেনা। আপনার কন্যা সন্তানটি শিশু বয়সের তুলনায় শারীরিক ভাবে বড় হয়ে গেলে তার সামনে প্রতিনিয়ত বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেন আর কন্যা ভিতরে ভিতরে আপনাদের হারিয়ে ফেলবার ভয়ে কাঁদে তার মনের খবর কি রাখেন? সেসব বাবা–মা একটা সময় কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ মনে করে, বিয়ের পরে ও যে বাবা–মার কাছ থেকে কন্যারা একটু সাহস চায়, বাবা–মার নির্ভরশীলতা চায় সেটা হয়তো আমলেই নেয় না বাবা মা। তাই কন্যা দিবসে আমরা যতই সমাজ পরিবর্তনের কথা বলি না কেন, কন্যাকে পাশে বসিয়ে ছবি তুলে যতই পোস্ট দিই না কেন! একজন মা বাবা মানসিকভাবে যতদিন আধুনিক হবে না, ছেলে সন্তান কন্যা সন্তানের মধ্যে পার্থক্য করবে না ততদিন এ দেশের কন্যা সন্তানদের মুক্তি নেই। তাই বারবার এটাই বলবো,, কন্যার মনের যত্ন নিন তার সাথে বন্ধুর মত কথা বলুন তাঁর চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব দিন তাকে সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ করে তুলে তারপর তাকে বিয়ে দিন।
তার পরাজয়ে তাকে আরো ভেঙে পরতে দিবেন না। তাকে কোন রঙের জামাটা মানায় ভালো সেটা যেমন জানেন তার মনের ভিতরের রঙগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। তবেই কন্যা দিবস সত্যিকার অর্থে সার্থক হবে।