অর্থবছরের ১৫দিন বাকি থাকতেই বিগত অর্থবছরের তুলনায় বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অর্থবছর শেষে অন্তত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বছরজুড়ে নানা সংকট, অস্থিরতা এবং সীমাবদ্ধতার মাঝেও চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদনশীলতায় রেকর্ড সৃষ্টি করাকে বেশ বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বমোট ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৯ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১৫ দিন বাকি থাকতেই চট্টগ্রাম বন্দর বছরের শুরু থেকে নানা অস্থিরতা ও প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জে পড়ে। এসব ঠিকঠাক ভাবে সামলে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। চলতি অর্থবছরে ১৫ জুন পর্যন্ত বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৯ টিইইউস (২০ ফুট হিসেবে)। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছিল। চলতি অর্থবছরের ১৫দিন বাকি থাকতেই বন্দর গত অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৮৯ টিইইউএস কন্টেনার বেশি হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাকি ১৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ১ লাখ টিইইউএস–এর বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, বছর শেষে গত বছরের তুলনায় অন্তত ৫ শতাংশ বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। যা বন্দরের জন্য একটি নুতন মাইলফলক তৈরি করবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই চট্টগ্রাম বন্দর বড় ধরণের হোঁচট খায়। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমাতে সরকারের নানা ধরণের পদক্ষেপ বন্দরের কর্মকাণ্ডে সরাসরি আঘাত করে। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, কারফিউ জারি, সড়কে অচলাবস্থায় বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে কন্টেনার পরিবহনে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে ভয়াবহ রকমের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দুই ঈদের ছুটি, কাস্টমসের কলম বিরতি, কন্টেনারমুভারসহ দফায় দফায় পরিবহন ধর্মঘটসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সব বাধা বিপত্তি কাটিয়েও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আগের বছরের তুলনায় বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বন্দরকে এই অর্জন করতে হয়েছে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় একাধিকবার বন্দর সফর করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যা বন্দরের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে দারুণ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে মন্ত্রণালয়ের ত্বরিৎ পদক্ষেপ আমাদেরকে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। তারা বলেন, বন্দরের চেয়ারম্যানসহ বোর্ড সদস্যরাও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। সম্মিলিত একটি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এই অর্জন বলেও তারা মন্তব্য করেন। বন্দরের অটোমেশান সার্ভিস সুবিধা, ই–গেট পাস চালু, কন্টেনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়ন, ইকুইপমেন্ট বহর সমৃদ্ধিকরণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বন্দরের কর্মকান্ডে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই ধরণের টিমওয়ার্ক ধরে রাখা সম্ভব হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকান্ডে আরো সফলতা আসবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, দেশে আমদানি–রফতানিকেন্দ্রিক সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কন্টেনার ও পণ্য পরিবহণের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। লয়’ড লিস্ট অনুযায়ী বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬৭তম। মূলত কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই এই তালিকা করা হয়। ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। তবে সেই অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে হ্যান্ডলিং কম হয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২১–২০২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১১ শতাংশে। ২০২০–২০২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে, প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০১৮–২০১৯ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং করেছিল ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউএস কন্টেনার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৭–২০১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৮ লাখ ৯ হাজার ৩৫৪ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।