করোনাকালে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমদানি রপ্তানি কমায় চট্টগ্রাম বন্দরে কমেছে কন্টেনার হ্যান্ডলিং। সরাসরি যার ধাক্কা লাগছে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে গত অর্থবছরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কমেছে। এরমধ্যে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ এবং আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার কমেছে আড়াই শতাংশ। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমার এই ধারা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে ১৯৯০ সালের দিকে বেসরকারি আইসিডি গড়ে উঠতে শুরু করে চট্টগ্রামে। বেসরকারি আইসিডিগুলো ২০০১ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র খালি কন্টেনার রাখতে পারতো। ২০০১ সালের পর থেকে বেসরকারি আইসিডির বিকাশ শুরু হয়। তখন থেকে রপ্তানি পণ্য কন্টেনার রাখা শুরু হয়। পরবর্তীতে ক্রমে আমদানি পণ্যের কন্টেনারও হ্যান্ডলিং করছে বেসরকারি ১৯টি আইসিডি। বর্তমানে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ৯৪ শতাংশ কন্টেনার বেসরকারি আইসিডিতে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে। একই সাথে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি আইসিডিগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দিনে দিনে বেসরকারি আইসিডির বিকাশ এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিং বাড়লেও চলতি অর্থবছরে কমে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের যেই হিসাব পাওয়া গেছে তাতে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার কমে গেছে আড়াই শতাংশ এবং রপ্তানি কমে গেছে চার শতাংশ। কন্টেনারের সংখ্যায় এই হিসাব বেশ বড় বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বেসরকারি আইসিডিগুলোতে ৬ লাখ ১০ হাজার ৯৫০ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৬ লাখ ৩৫ হাজার টিইইউএস। আইসিডিগুলোতে গত বছর আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৩ লাখ দশ হাজারেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ৩ লাখ ২ হাজার ৫২০ টিইইউএসে নেমে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বেসরকারি আইসিডিগুলোতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ২০১০ সালে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৫১২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। যা বন্দরের সর্বমোট হ্যান্ডলিংয়ের ৭৪ শতাংশ। ওই বছর বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৮ টিইইউএস। দশ বছরের ব্যবধানে গত বছর বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ লাখ টিইইউএসের বেশি। গত বছর আইসিডিগুলোতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬০ টিইইউএস।
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের স্বর্ণালী সময় ছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ৩০ লাখ ৮৮ হাজার কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে চট্টগ্রাম বন্দরে থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবে উন্নীত হয়। ওই সময় বেসরকারি আইসিডিগুলোতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১৮ লাখ ১৫ ৩১৭ টিইইউএস। কিন্তু করোনার থাবায় বছর না ঘুরতেই সেই ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২০ সালে ৩৩ লাখেরও বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার আশাবাদ থাকলেও করোনার কারণে তা নেমে আসে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউসে। চলতি বছরও চট্টগ্রাম বন্দর করোনার থাবা থেকে বের হয়ে আগের অবস্থানে যেতে পারে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কমার সাথে সাথে বেসরকারি ১৯টি আইসিডিতেই কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ কমেছে। করোনার প্রভাবে এমনটি হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার ধাক্কা চলছে। এর প্রভাব আমাদের এখানেও পড়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিই চলবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।