প্রথমবারের কারফিউ, সাধারণ ছুটি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ধাক্কা সামলানোর আগেই আবারো কারফিউ এবং সাধারণ ছুটিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের দ্বিতীয় ধাক্কার মুখে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য আবারো মুখ থুবড়ে পড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারের পাহাড় তৈরি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দর চালু রাখা যায় কিনা তা ভেবে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র বলেছে, কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের শেষদিকে দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, সাধারণ ছুটিতে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং কারফিউতে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে ছিল। কারখানা থেকে আইসিডি কিংবা আইসিডি থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনও নেমে এসেছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। ওই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো কন্টেনারের পাহাড় গড়ে ওঠে। যা আইসিডি, কারখানা কিংবা আমদানিকারকদের নিকট সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয়নি। টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকায় বন্দরে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বহু বেশি কন্টেনার আটকা পড়ে। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বন্দরে ঢাকা আইসিডিমুখি কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠে। পাঁচদিন পর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু এবং গত কয়েকদিন পুরোদমে কাজ করেও আগেকার সেই ধাক্কার ধকল সামলানো সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সাত দিনের স্টোর রেন্ট মওকুফ করেছে সরকার। কন্টেনার খালাসকে উৎসাহিত করতে ব্যবসায়ীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছিল। দেশে সীমিত পরিসরে কারফিউ বহাল থাকলেও বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম পুরোদমে গতি সঞ্চার করে। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমও গতিশীল হয়। বিদেশ থেকে পণ্য বোঝাই প্রচুর কন্টেনার আসে, ডেলিভারিও হয় স্বাভাবিক গতিতে। অপরদিকে বিদেশে পণ্য পাঠানোও গতিশীল হয়ে উঠে। ১৯টি বেসরকারি আইসিডি থেকে কন্টেনার পরিবহনও স্বাভাবিক গতি পায়। কিন্তু ওই পাঁচ দিনে জমে যাওয়া কন্টেনারের ধকল সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। এরই জেরে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে আটকে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে ৩০/৩১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকে। কিন্তু গতকাল বন্দরের ইয়ার্ডে আটকে থাকা কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৩৯ টিইইউএস। বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৩১৮ টিইইউএস। ধারণক্ষমতা বেশি থাকায় আটকে থাকা কন্টেনার রাখার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও এত বিপুল সংখ্যক কন্টেনার বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের উপর মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট মুভমেন্টের গতি কমে যায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনারের সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছিল।
কিন্তু দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গতকাল থেকে আবারো সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গতকাল কারফিউসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারির সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। গতকাল মাত্র ২ হাজার ৬৫৭ টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে। অথচ দিন কয়েক আগেও বন্দর থেকে ৫ হাজারের বেশি কন্টেনার ডেলিভারির রেকর্ড রয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতরাত থেকে আবারো অনির্দিষ্টকালের কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে আজ থেকে দেয়া হয়েছে তিনদিনের সাধারণ ছুটি। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে পণ্যের শুল্কায়নসহ বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে বিধায় বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি আবারো শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। তবে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা কন্টেনারগুলো জাহাজ থেকে বন্দরে নামানো হবে। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা আবার বাড়বে। তিনদিনে এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার জায়গার সংকট না হলেও এসব কন্টেনার পরিবর্তীতে ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হবে। ফলে আবারো কন্টেনার জটের কবলে পড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর–এমনটি মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দর কেন্দ্রিক ব্যাংকের শাখা খোলা রাখা এবং পণ্য ডেলিভারি এবং পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা গেলে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
গতকাল একাধিক ব্যবসায়ী শিল্পপতি দৈনিক আজাদীকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বন্দর সচল রাখার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।