পারমাণবিক উত্তেজনার খেলায় সমপ্রতি ইরানের মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর এখন প্রশ্ন উঠছে এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত কী অর্জন পেরেছে? হামলার পরদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ ও নিঃশেষভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
কিন্তু রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান ড্যান কেইন প্রেসিডেন্টের এই দাবিকে পাশ কাটিয়ে যান। তারা বলেন, বিমান বাহিনীর বি–২ বোমারু বিমান এবং নৌবাহিনীর টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার ফলে তিনটি স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত কোথায় গেছে, তা কেউ জানে না।
ফোর্দোর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা কতটা প্রতিরোধী? : যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এক ডজন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার আঘাতে সেখানে একাধিক গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, স্থাপনাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এই বোমাগুলোর উচ্চ ধ্বংসাত্মক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, ফোর্দোর মতো লক্ষ্য ধ্বংস করতে বাস্তবে কতটা কার্যকর, তা এখনো প্রমাণিত নয়। বাঙ্কার–বাস্টার বা এমওপি বোমা উন্নত জিপিএস/আইএনএসের মতো নেভিগেশন সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়, যা লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক মিটারের মধ্যেই আঘাত হানতে সক্ষম।
এর লার্জ পেনেট্রেটর স্মার্ট ফিউজ (এলপিএসএফ) মাটির গভীরে বিস্ফোরণের সুবিধা দেয়, যার ফলে বাঙ্কারের ফাঁকা অংশ শনাক্ত করে বিস্ফোরণের সর্বোচ্চ প্রভাব তৈরি করা যায়। এই বোমা ৫০০০ পিএসআই কংক্রিটে ৬০ মিটার, শক্ত পাথরে ৪০ মিটার আর ১০০০০ পিএসআই অতিরিক্ত শক্ত কংক্রিটে ৮ মিটার পর্যন্ত ভেদ করতে পারে। পিএসআই বা পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি হলো কংক্রিটের সংকোচন প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি একক। এটি বোঝায় প্রতি বর্গইঞ্চিতে কত পাউন্ড বল প্রয়োগ করলে কংক্রিট ভেঙে যাবে বা ফেটে যাবে। ভূমিকম্প এবং সামরিক হামলার নিয়মিত হুমকির প্রেক্ষাপটে ইরান শক্তিশালী নির্মাণ উপাদান তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বহু বছর ধরেই। ইরান অন্তত এক দশক আগে থেকেই ‘আল্ট্রা হাই পারফরম্যান্স কংক্রিট (ইউএইচপিসি) উৎপাদন করতে সক্ষম যা সাধারণ উচ্চ–ক্ষমতার কংক্রিটের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও নমনীয়। এটি তৈরি হয় সাধারণ কংক্রিটে কোয়ার্টজ কণিকা (স্ফটিকাকার খনিজ) ও বিশেষ পলিমার মিশিয়ে। ইউএইচপিসি সাধারণ কংক্রিটের মতো বোমার আঘাতে চূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে স্প্লন্টার আঘাতের ঝুঁকি কমে যায় এবং এটি বাঙ্কার নির্মাণের জন্য আদর্শ। অস্ট্রেলিয়ান পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৬ টন ট্রাইনাইট্রোটলুইনের (টিএনটি) বিস্ফোরণেও ইউএইচপিসি কেবল ফাটে, ধ্বংস হয় না। সামরিক ব্যবহার ছাড়াও এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় নিরাপদ ও টেকসই ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।