টেকনাফে মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বিতর্কের মুখে পড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসাবে এবার জেলার ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শককে একযোগে বদলি করা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার মর্যাদার ৮ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
বুধবার ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাদের নতুন কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। বদলিকৃতদের ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরনো কর্মস্থল ছেড়ে ৩০সেপ্টেম্বর রাজারবাগের পুলিশ অডিটরিয়ামে একটি ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আসা প্রজ্ঞাপন মতে, উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারকে সিলেট, মহেশখালী থানার ওসি দিদারুল ফেরদৌসকে বরিশাল, রামু থানার আবুল খায়েরকে রাজশাহী, চকরিয়ার ওসি হাবিবুর রহমানকে খুলনা, পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজমকে রংপুর, কুতুবদিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়। এছাড়া রামু থানার পরিদর্শক রুমেল বড়ুয়াকে সিআইডি ঢাকা অফিসে, মিজানুর রহমানকে সিআইড ঢাকা, পেকুয়ার ওসি(তদন্ত) মাঈন উদ্দিনকে বরিশাল, খোরশেদ আলমকে সিলেট, মো. একরামুল হককে বরিশাল, মো. আমিরুল ইসলামকে রংপুর, মানস বড়ুয়াকে ময়মনসিংহ, এসএম মিজানুর রহমানকে সিলেট, এসএম আতিক উল্লাহকে ঢাকা, মো. আবুল মনসুরকে বরিশাল, মো. ইয়াসিনকে এসএমপি সিলেট, মো. আনোয়ার হোসেনকে বরিশাল, মো. আরিফ ইকবালকে রাজশাহী, টেকনাফের ওসি(তদন্ত) এবিএম দোহাকে খুলনা, নুরুল আলম মজুমদারকে বরিশাল, মো. আসাদ্দুজ্জামানকে রাজশাহী, মো. আলী আরশাদকে বরিশাল, মো. মাহবুব মোর্শেদকে সিলেট, রফিকুল ইসলাম খানকে বরিশাল, আমিনুল ইসলামকে এসএমপি সিলেট, জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশকে এসএমপি সিলেট, আনিসুর রহমানকে বরিশাল, কক্সবাজার সদর থানার ওসি(তদন্ত) মো. মাসুম খানকে খুলনা, ফজলুল আলমকে বরিশাল, মো. মহিদুল আলমকে বরিশাল, রুপক চন্দ্র দাশকে বরিশাল, বদরুল আলম তালুকদারকে বরিশাল ও মো. হাবিবুর রহমানকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মতিক্রমে পুলিশ সদস্যদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জনস্বার্থে উল্লেখিত স্থানে বদলি করা হয়েছে।
এরআগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনকে এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৮ পুলিশ সদস্য ও ৩ এপিবিএন সদস্যসহ ইতোমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসপি মাসুদ হোসেনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগও ওঠে। সিনহার হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে এসপি মাসুদ হোসেনকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে মামলার বাদী আবেদন করলেও আদালত তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খারিজ করে দিয়েছেন। এছাড়া সিনহা হত্যাকান্ডের পর ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এর নামে ক্রসফায়ার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেভাবে আদালতে মামলার জন্য আবেদন করা হচ্ছে এবং আরো নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাতে পুরো জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর পুলিশের ওপর জনগণের এ আস্থার সংকট নিরসনেই জেলা পুলিশকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একটি উর্ধতন সূত্র।