দেশের প্রধান অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপে শহরের রাস্তাঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম। হোটেলগুলো প্রায় শতভাগ বুকিং। ক্রেতাদের চাপে সাগরপাড়ের বিপণীকেন্দ্রগুলোও খোলা থাকছে সারারাত। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহত থাকবে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ বাড়লেও গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে উপচে পড়া ভিড়। গত শুক্রবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ৫ দিনে প্রায় আড়াই লাখ পর্যটক এসেছেন, যারা গড়ে ২ দিন করে কক্সবাজারে অবস্থান করেছেন। আর এসব পর্যটকের যাতায়াত, থাকা–খাওয়া, ভ্রমণ ও কেনাকাটা বাবদ অন্তত আড়াইশ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
হোটেল মালিকরা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। আর এবারের থার্টি ফার্স্ট এর ছুটিতেও প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৫ শত হোটেল–মোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে হোটেলে প্রায় শতভাগ রুম বুকিং হচ্ছে।
কলাতলী–মেরিন ড্রাইভ হোটেল–রিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে প্রায় শতভাগ কক্ষ
বুকিং হয়েছে। তবে গত শুক্রবার থেকে শতভাগ বুকিং যাচ্ছে। আগামী ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর প্রায় শতভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে।
এদিকে পর্যটকদের আনাগোনায় শহরের রাস্তাঘাটে লেগে যাচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। বিশেষ করে কলাতলী মোড়ের দীর্ঘ যানজটের কারণে অচল হয়ে পড়ছে মেরিন ড্রাইভ, শহরমুখী ও বাসটার্মিনালমুখী সড়কগুলো। পর্যটকেরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকীপল্লী, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাহাজে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এবং স্পিডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির পরিদর্শনে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ঘুরতে যাচ্ছেন কক্সবাজারের পাশ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ক্রমান্বয়ে পর্যটকদের চাপ বাড়তে থাকবে। আর ইংরেজি বছরের প্রথমদিন থেকে চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। তবে শীতকালীন পর্যটন মৌসুমে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের বেশ ভাল চাপ থাকে।
টুরি্যস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটকদের চাপের কথা মাথায় রেখে কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে এবং পর্যটন স্পটসমূহে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতে গ্রহণ করা হয়েছে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজারে পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় রয়েছে।