কক্সবাজারে হাসপাতালে রোহিঙ্গা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ

| সোমবার , ৫ জুলাই, ২০২১ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোহিঙ্গা রোগীর বোনকে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে হাসপাতালটির তিন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্ত্যক্তের অভিযোগ ওঠায় তিন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১ জুলাই রাতে শহরের হাসপাতাল সড়কে জেনারেল হাসপাতাল কক্সবাজার নামের বেসরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা হলেন হাসপাতালের সিকিউরিটি ম্যান নুরুল হক (২৬), লিফট ম্যান আতাউর রহমান (২২) ও অফিস সহকারী (পিয়ন) মো. শফি (২০)। খবর বিডিনিউজের।
এই ব্যাপারে ওই মেয়ের পক্ষে থানায় কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া না গেলেও পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে পুলিশ খবরটি অবহিত হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী তরুণী ও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা কতটুক আপাতত বলা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও কেউ অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
জেনারেল হাসপাতাল কক্সবাজারের মহাব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, গত ২৭ জুন আন্তর্জাতিক সংস্থা মেডিসিনস্‌ স্যান্স ফ্রন্টিয়ারস্‌ (এমএসএফ)-হল্যান্ডের উখিয়ার কুতুপালংয়ের হাসপাতালের রেফার্ড করা এক রোহিঙ্গা নারী রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এমএসএফের এক নারী প্রতিনিধি ওই রোহিঙ্গা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ওই রোহিঙ্গা রোগীর (২৩) সঙ্গে হাসপাতালে তার ১৭ বছর বয়সী ছোট বোন আসেন।
এই রোগী উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তিন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি স্বীকার করলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন জেনারেল হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন যে জনবল, রোগী ও তাদের স্বজনরা উপস্থিত থাকেন, এ রকম পরিবেশে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। ঘটনার রাতে ধর্ষণ নয়, রোগীর এক স্বজনের সঙ্গে ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
আইনের দিক থেকে ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনাটিও অপরাধ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিজেরাই কেন ব্যবস্থা নিয়েছেন তার ব্যাখা দেন আরিফুল। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণী অবিবাহিতা। তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ব্যাপক আকারে রূপ দিতে চায়নি। এই কারণে ইভটিজিংয়ের ঘটনাটি আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়নি। সুস্থ হয়ে ওঠায় শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ওই রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, নানা মাধ্যমে কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোহিঙ্গা নারী রোগীর ছোট বোন ধর্ষিত হওয়ার খবর শুনেছেন। ঘটনাটির ব্যাপারে এমএসএফ-হল্যান্ডের সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখা চাওয়া হবে। এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা এমএসএফ-হল্যান্ডের উখিয়ার কুতুপালংয়ের হাসপাতালের সহকারী সমন্বয়ক ডা. ফাতেমা জিন্নাত বলেন, জরায়ু সমস্যা নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোহিঙ্গা নারী রোগী মোটামুটি সুস্থ হয়েছেন। শনিবার সকালে ছাড়পত্র নিয়ে তাকে এমএসএফের কুতুপালং হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে তিনি আরও কয়েকদিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তবে ধর্ষণের মতো ঘটনার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ রোগী বা তার বোনের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
এই ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছেন। খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষণে ধসে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সীমানা পিলার
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশগামী শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে খোঁজ নিতে বললেন হাইকোর্ট