কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে ও পানিতে ডুবে রোহিঙ্গাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শরণার্থী ক্যাম্পের অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা। আর মহেশখালীতে দেয়াল চাপায় মারা গেছেন এক কিশোরী। এছাড়া বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর।
উখিয়ায় ৬ মৃত্যু : উখিয়া প্রতিনিধি জানান, উখিয়ার বালুখালীর একটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নারী ও শিশুসহ ৫ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এছাড়া পানিতে ডুবে অপর এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে বালুখালী ১০ নম্বর ক্যাম্পে এ দুর্ঘটনা ঘটে। উখিয়ার প্রায় ১০টি ক্যাম্পের অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নিহতরা হলেন, বালুখালী ক্যাম্প-১০ এর জি-৩৭ ব্লকের শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তার শিশু সন্তান শফিউল আলম (৯), জি-৩৮ ব্লকের মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী গুল বাহার (২৫), তার আড়াই মাসের শিশু সন্তান আব্দুর রহমান ও কন্যা আয়েশা সিদ্দীকা (১) নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছে শাহ আলমের দুই সন্তান নুর ফাতেমা (১৪) ও জানে আলম (৮)। অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দৌজা নয়ন এবং ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এসপি তারিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার বিকাল থেকে টানা বর্ষণে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অন্তত ২৫ হাজার বসতঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে কুতুপালং ক্যাম্প-৫, বালুখালী ১ নং ক্যাম্প, জামতলী ক্যাম্প, হাকিমপাড়া, কুতুপালং ১/ইস্ট, বালুখালী ৮/ইস্ট, বালুখালী ১০, ১১ ও ১২, সীমান্তের জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ মধুছড়া ৩ ও ৪ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা পানিবন্দি।
পাহাড় ধসে এক ব্যক্তি নিহত : টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে পাহাড় ধসে মাটির দেয়াল চাপায় রকিম আলী (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের উলুবনিয়া রাস্তার মাথার মনির ঘোনা গ্রামের মাঝের পাড়ার গতকাল সকাল ১১টার দিকের এ ঘটনা ঘটে। নিহত রকিম আলী স্থানীয় আলী আহমেদের ছেলে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন রশীদ সিকদার খবরটি নিশ্চিত করে বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।
মহেশখালীতে দেয়াল চাপায় কিশোরী নিহত : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীতে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো বাজারের এক শতাধিক দোকান। রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ।
পাহাড় ধসে বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে দেয়াল চাপা পড়ে মোরশেদা বেগম (১৭) নামের এক কিশোরী নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর রাতে উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহির পাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের আনছারুল করিমের মেয়ে।
সোমবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণে উপজেলার হোয়ানক, কালারমারছড়া, শাপলাপুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গতকাল দুপুরে পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও মহেশখালীর ইউএনও মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়া ও হরিয়ারছড়া গ্রামে। দুটি গ্রামে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হরিয়ারছড়া এলাকায় উলা খালি, হরিনাদিয়া ও বড়ঘোনা নামে ৩টি চিংড়ি প্রজেক্টের স্লুুইচগেট বন্ধ রেখে বন্যার পানি আটকে রাখায় দুই গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়।
ইউএনও মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।