ঘরে-বাইরে শিশুদের নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারের বিভিন্নস্থানে পানিতে ডুবে ও গাড়ি চাপায় ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী অথবা পঙ্গু হয়েছে বেশ কয়েকটি শিশু। আসছে বর্ষাকালে শিশুদের নিরাপত্তা ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। কক্সবাজারে প্রায় নিয়মিতভাবেই পানিতে ডুবে অথবা রাস্তায় গাড়ি চাপায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে পানিতে ডুবে ৫ শিশুর ও গাড়ি চাপায় ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল রোববার সকালে কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কুলার পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে ওহি (০৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু ওহি ওই গ্রামের এহাছানের মেয়ে।
জানা যায়, বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে খেলার সময় পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞাতে পুকুরে পড়ে যায় ওহি। পরে তার দেহ পুকুরে ভেসে ওঠলে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আগেরদিন শনিবার বিকালেও একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের চাড়িপাড়া এলাকায় একইভাবে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় ছাবিহা নামের ১৩ মাসের এক শিশু। গত শুক্রবার সকালে রামুর বাঁকখালী নদীতে ডুবে মারা যায় তাসফিয়া নুর (৮) ও জান্নাতুল মাওয়া (৫) নামে ২ শিশু। শিশু দুটি পরস্পর সহোদরা। এরমধ্যে তাসফিয়া নুর রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ও জান্নাতুল মাওয়া একই স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে পুকুরের পানিতে ডুবে জান্নাতুল ফেরদৌস (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটি ওই ইউনিয়নের বাজার পাড়া এলাকার আমান উল্লাহর মেয়ে।
শুধু পুকুরে ডুবে নয়, রাস্তাঘাটে বিভিন্ন গাড়ির ধাক্কায় নিয়মিত প্রাণ যাচ্ছে অথবা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। গত সপ্তাহে কুতুবদিয়ার মনোহরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অটোরিকশার ধাক্কায় মেহেরুন্নেছা পুতু (৮) নামে এক শিশু শিক্ষার্থী নিহত ও আরো দুই শিশু আহত হয়। নিহত পুতু উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মনোহরখালী গ্রামের মাসুক হোসেন বাদশার মেয়ে।
গত সোমবার সকালে চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের লালব্রিজ সংলগ্ন পেট্রল পাম্পের সামনে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মাহিয়া জান্নাত নুসরাত (১৫) নামের এক ছাত্রী নিহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে ক্ষুব্ধ জনতা।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছাড়াও স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তায় বখাটেদের উৎপাত সইতে হচ্ছে কন্যা শিশুদের। এমনকি নানা কৌশলে অপহরণের শিকারও হচ্ছে এই শিশুরা। গত ১৯ এপ্রিল উখিয়ায় সালমা আক্তার নামের ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজ স্কুলছাত্রীর মা জালিয়াপালং ইউনিয়নের রূপপতি গ্রামের মনোআরা বেগম তার মেয়েকে বখাটেরা অপহরণ করেছে মর্মে অভিযোগ করেছেন। উখিয়া থানায় এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের বিশিষ্ট কবি ও লেখক মাস্টার নুরুল আজিজ চৌধুরী বলেন, ঘরে-বাইরে শিশুদের নিরাপত্তা সংকট দিন দিন বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণ অথবা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো কর্মকৌশল দেখা যাচ্ছে না। অথচ শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ার জন্য আমরা জাতি হিসাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শিশুদের জন্য ঘরে বাইরে একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে শীঘ্রই একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ের উপর গুরুত্ব দেন কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর এমএ বারী।