কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে বিপদে পড়লে পর্যটকদের একমাত্র সম্বল লাইফগার্ড। বিপদে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করে প্রাণ রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বর্তমানে লাইফগার্ড ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পানিতে গোসল করা এক মুহূর্তও নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অক্টোবর থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে লাইফগার্ড সংস্থা সী–সেইফ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে সংস্থাটি। এতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে পর্যটকদের নিরাপত্তা।জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ২০১৪ সাল থেকে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের সী–সেইফ প্রকল্প শুরু হয়। ২৭ জন দক্ষ কর্মী তিন শিফটে ভাগ হয়ে সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি মাসে প্রকল্পটি শেষ হবে। সী–সেইফ প্রকল্পের মাঠদল ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ১১ বছরে ৭৯৫ জন ডুবে যাওয়া মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেছেন সী–সেইফ লাইফগার্ডের কর্মীরা। কিন্তু আগামী মাস থেকে সমুদ্রপাড়ে আর হয়তো দেখা মিলবে না তাদের। এ মাসেই শেষ হবে প্রকল্পের কার্যক্রম। ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক প্রকল্পটির দাতা সংস্থা রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউটের (আরএনএলআই) কাছে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি লিখেছিলেন। তার ভিত্তিতে দাতা সংস্থাটি এ বছরে ৬ মাস, পরে আরো ৩ মাস বাড়ায়। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ চলবে।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. শাইকুল ইসলাম হেলাল বলেন, দাতা সংস্থা বলে দিয়েছে এ প্রকল্পটির মেয়াদ আর বাড়াবে না। আমরা মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়ে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আশা পাইনি। তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আন্তরিক। তিনি এ প্রকল্পটিকে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্র সৈকতের অতীত এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতীতে দীর্ঘ সময় লাইফগার্ড ছাড়া সাগরের গোসল করা যেত। কিন্তু বর্তমানে তা সম্ভব হয় না। লাইফগার্ডের উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ হলে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়বেন পর্যটকরা।
পর্যটকরা বলছেন, লাইফগার্ড ছাড়া সমুদ্র নেমে গোসল করা কল্পনা করা যাবে না। কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক হাকিমুল ইসলাম বলেন, লাইফগার্ডের কর্মীরা প্রতিনিয়ত আমাদের সতর্ক করেন। এতে পর্যটকরা অনেক সচেতন থাকেন, বিপদ থেকে রক্ষা পান। এছাড়া বিপদে পড়লে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে জীবন বাঁচান। তারা না থাকলে পর্যটকরা ইচ্ছেমতো সাগরে নেমে মৃত্যুর মুখে পড়বেন।
পর্যটকসেবী সংগঠন টুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, সমুদ্র সৈকতকে টার্গেট করে পর্যটকরা এখানে আসেন। অধিকাংশ পর্যটক সাগরে নেমে গোসল করতে চান। লাইফগার্ড না থাকলে পর্যটকরা সহজভাবে সমুদ্রে নামতে পারবেন না। ফলে অনেক পর্যটক কক্সবাজার বিমুখ হবেন। এছাড়া প্রকল্প শেষ হলে কর্ম হারাবেন ২৭ জন লাইফগার্ড সদস্য। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা জেনে তারাও চিন্তিত।
সী–সেইফ লাইফগার্ডের দলনেতা ও প্রশিক্ষক মো. ওসমান গনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অল্প বেতনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে আসছি। সমুদ্র ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। আমাদের ২৭ জন কর্মী এখন নিজেদের জীবন–জীবিকা নিয়ে চিন্তিত।
বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তত্ত্বাবধায়ক ও এডিএম মো. শাহিদুল আলম বলেন, এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালে বন্ধ হয়ে যেত। আমরা দাতা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে এ পর্যন্ত চালাচ্ছি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উত্তর আসেনি। তারা আরো বড় পরিসরে চিন্তা করতে পারে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, লাইফগার্ড না থাকলে কত পর্যটকের মৃত্যু হতো তা সহজে আন্দাজ করা যায়। অক্টোবর থেকে লাইফগার্ড থাকছে না। তখন পরিস্থিতি কী হবে সেটাই ভাবছি।