পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র রোমাঞ্চকর প্যারাসেলিং। প্যারাসেলিংয়ে পাখির চোখে এক সাথে সমুদ্র ও পাহাড়ের অপার সৌন্দর্যের মিতালি দারুণ বিমোহিত করে পর্যটকদের। কিন্তু প্যারাসেলিং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দুর্ঘটনা, ‘গলাকাটা অর্থ আদায়’সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সমপ্রতি এই অভিযোগ আরো জোরালো হয়েছে।
সর্বশেষ কয়েকদিন আগে এক পর্যটক দম্পতি প্যারাসেলিংয়ে রাইডিংকালে বহু উপর থেকে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে টনক নড়ে প্রশাসনের, বন্ধ করে দেয়া হয় ফরিদের মালিকানাধীন সেই প্যারাসেলিংটি।
এবার হার্ডলাইনে গেল জেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার এক অভিযান চালিয়ে ফরিদের মালিকানাধীন প্যারাসেলিং প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর–হিমছড়ি পয়েন্টের মাত্র দুই–আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে পাঁচটি প্যারাসেলিং প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট পর্যটকরা। এছাড়া পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে ইসিএ এলাকায় প্যারাসেলিং ও নানা স্থাপনা তৈরি করায় পরিবেশবাদীরা বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে এসব প্যারাসেলিং নিয়ে অহরহ অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদেরও। নড়বড়ে প্যারাসেলিং, গলাকাটা ফি আদায়, পর্যটকদের হেনস্থা, জিম্মি করে প্যারাসেলিং করানো ও জিম্মি করে ফি আদায়ের মতো অভিযোগ রয়েছে। পর্যটকদের অভিযোগ, দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ফি আদায় করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাইডিংয়ের কথা বলে ২ থেকে ৩ মিনিট পর নামিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদ করলে প্যারাসেলিং প্রতিষ্ঠানের সংঘব্ধ লোকজন পর্যটকদের গায়ে হাত তোলাসহ নানাভাবে লাঞ্ছিত করে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্যারাসেলিং রাইডিংকালে রশি ছিঁড়ে সাগরে পড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পর্যটন মৌসুম শেষে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম শুরু হলেও এখনো সমানতালে প্যারাসেলিং চালু রাখা হয়েছে। এতে গত দুই মাসে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বড় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় প্যারাসেলিংয়ের মালিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে অব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখে।
জেলা প্রশাসনের দাবি, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে প্যারাসেলিংয়ের পাশপাশি বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে প্যারাসেলিং মালিকরা। এমনকি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, ইসিএ এলাকায় কাঁকড়াসহ নানা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে প্যারাসেলিং করা হচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। কিন্তু সেটা আমলে নেয় না প্রশাসন। যত্রতত্র প্যারাসেলিং অনুমতি দেয়া হয়। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা প্রতিবাদ জানালেও তা আমলেই নেয়নি প্রশাসন।
অন্যদিকে এসব প্যারাসেলিং প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থানা নিয়ে ক্ষুব্ধ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় উপাদান প্যারাসেলিং। কিন্তু কোনো নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা না রেখে এসব প্যারাসেলিং করা হচ্ছে।
কঙবাজার পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেছার নাফি বলেন, কয়েকদিন আগে পর্যটক দম্পতি যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল তা নিয়ে নানা তালবাহনা করেছে প্রতিষ্ঠানের মালিক ফরিদ। এমনকি আহতদের লুকিয়ে রেখে ঘটনা ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করে। রাইডিংয়ের আরো নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্যারাসেলিংয়ের আঁড়ালে সৈকত দখল করে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনাও তৈরি করে। তাই অভিযান পরিচালনা করে সবকিছু উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্যগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।